কালমেঘ পাতার অসাধারণ ৫টি উপকারিতা
হাকীম মিজানুর রহমান : কালমেঘ পাতার অসাধারণ ৫টি উপকারিতা রয়েছে। আপনার সময়ের প্রয়োজনে তা জেনে রাখুন। হয়তো একদিন তা কাজে লাগতেও পারে।
১. ডায়াবেটিস: কালমেঘ পাতা ডায়াবেটিস এর অব্যর্থ ওষুধ। এটি আমাদের শরীরের রক্তে চিনি/গ্লুকোজের পরিমাণকে কম রাখতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ইহা সেবন করা উচিত।
২. ক্যান্সার: কালমেঘ ক্যান্সার নিরাময় এর ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী। এর ঔষধি গুণ আমাদের শরীরে ক্যান্সার এর কোষগুলোকে সক্রিয় হতে দেয় না বা ক্যান্সারের কোষগুলোকে বাড়তে দেয় না। এটি ক্যান্সার রোগীদের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩. লিভার: লিভার জনিত যে কোনো রকম সমস্যার অব্যর্থ ওষুধ এই কালমেঘ পাতা। এটি লিভার টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত মদ্যপান, বা অতিরিক্ত কড়া ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কালোমেঘ পাতা এর নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আজকাল আমাদের খাদ্যাবাস বা ফল ও সবজিতে ব্যবহৃত পেস্টিসাইড আমাদের লিভারকে খারাপ করে দেয়। কালোমেঘের নিয়মিত সেবন এই সমস্যার সবথেকে ভালো সমাধান।
৪. আর্থারাইটিস ও গাউট: কালমেঘ পাতা আর্থারাইটিস ও গাউট (বাত) এর ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ১৫ থেকে ২০টি কালমেঘ পাতার রস করে প্রতিদিন খেলে আর্থারাইটিস বা গাউট এর সমস্যা থেকে দূরে থাকা যেতে পারে।
৫. জ্বর, সর্দি, কাশি: কালমেঘ পাতা জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা, গলা বসে যাওয়া, টন্সিলাইটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কালমেঘ পাতা ভালো করে ধুয়ে হালকা গরম জল মিশিয়ে ছাঁকনিতে ছেঁকে নিতে হবে। এই কালমেঘ পাতার রস যেকোনো রকম ঠান্ডালাগা জনিত রোগ খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে এর স্বাদ অত্যন্ত তিত্কুটে, তাই রস খাওয়ার সাথে সাথে এক চামচ মধু খেয়ে নিলে ভালো।
অন্যান্য উপকারিতা:
১. জ্বর বা ক্রনিক ফিভার বা ভাইরাল ফিভারঃ যেকোনো রকম জ্বর বা ক্রনিক ফিভার বা ভাইরাল ফিভার আমাদের শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়, এছাড়া এই সমস্ত রকম জ্বর আমাদের লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কালমেঘ পাতার রস আমাদের এইসব রকম জ্বর এর ফলে হওয়া শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া জ্বর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকেও ঠিক করতে সাহায্য করে।
২. ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবেঃ এছাড়া এই পাতা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।
৩. ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়া বা গ্যাস, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধেঃ ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়া, বা গ্যাস, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা রকম রোগের ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া কৃমি হলেও শিশুদের কালমেঘ পাতার রস খাওয়ানো হয়। এর তিৎকুটে স্বাদ কৃমিগুলিকে মেরে ফেলে পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
৪. রক্ত সঞ্চালনঃ কালমেঘ পাতা রক্তকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফলত আমাদের ত্বকের নানারকম সমস্যার ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া কালমেঘ পাতা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৫. আলসার প্রতিরোধক হিসাবেঃ
আলসার প্রতিরোধক হিসেবে কালমেঘ পাতার রস খাওয়া হয়। কালমেঘ পাতা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৬. শারীরিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ
ইহা নিয়মিত সেবন আমাদের শারীরিক শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৭. অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যাঃ
অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যা বা এর থেকে হওয়া নানা রকম অবাঞ্ছিত সমস্যার ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস উপকারী।
৮. বিষাক্ত প্রাণী ও অন্ন্যান্য পোকা মাকড় এর কামড় নিরাময়ে
সর্প দংশন বা বিছে বা এই ধরনের বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ের উপশম হিসেবে কালমেঘ পাতার সাথে পুরো গাছ টিকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৯. কুষ্ঠ রোগ এবং কলেরার চিকিৎসায় : আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কুষ্ঠ রোগ এবং কলেরার চিকিৎসা করতে কালমেঘ পাতা ব্যবহৃত হয়।
বিরুদ্ধ ব্যবহারঃ গর্ভবতী মহিলাদের কালমেঘ পাতার রস সেবন একেবারেই উচিৎ নয়।