ফরিদগঞ্জে সরকারের ৩৮ লাখ টাকা জলে

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করণে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করতে চেয়েছিলেন সরকার। সারাদেশে প্রায় শত কোটি টাকা বাজেটের এই প্রকল্প ভেস্তে গেছে অঙ্কুরেই। প্রকল্প বাতিল হলেও ইতিমধ্যেই জলে গেছে এই উপজেলায় ব্যয়িত প্রায় ৩৮লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সারাদেশের ন্যায় ফরিদগঞ্জ এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য কেনা হয় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। সেই অনুযায়ী উপজেলার ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এগুলো ক্রয় করে স্থাপন করা হয়। এই ক্রয়েও অভিযোগ রয়েছে জালিয়াতির।

সাবেক সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট করে কিনা হয়েছিল এই বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো। ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ যন্ত্রাংশ। করোনার দীর্ঘ সময় স্কুল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যন্ত্রটি চালু রাখতে বিদ্যুৎ সংযোগ, ইন্টারনেট কানেকশন ও কম্পিউটারের প্রয়োজন ছিল। বিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ ও কম্পিউটারের অপ্রতুলতায় ভেস্তে যায় এই কার্যক্রম। এখন ব্যবহার না হওয়ায় জঞ্জালে পরিনত হয়েছে মেশিনগুলো।

চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৯০টির মধ্যে ১৮০টি প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছিল এই বায়োমেট্রিক হাজিরা। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশই বিকল হয়ে পড়ে আছে। বাকিগুলোরও ব্যবহার নেই।

সূত্র জানায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের বার্ষিক ¯িøপ ফাÐ থেকে অর্ধেক টাকা দিয়ে কেনা হয় যন্ত্রটি। এটি ব্যবহার না হলেও উপজেলায় অনলাইন চার্জের নামে হাজার হাজার টাকা নেয়ার দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির সভাপতি বাজার যাচাই করে এই বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ের কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসার অধিকমূল্য দেখিয়ে ক্রয় করেন এসব মেশিন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকরা অনেক সময় শিক্ষা অফিসে, বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ফলে বায়োমেট্রিক হাজিরা থাকলে তাদের এসব অনুষ্ঠানে যেতে সমস্যা হয়। আবার এই প্রকল্প চালুর পর পরই করোনার কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। অনেক স্কুলে এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক স্কুলে সচল থাকার পরও সেটিকে বিকল হিসেবে শিক্ষা অফিসে রিপোর্ট করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছকু একজন শিক্ষক বলেন, বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসা শুরু করেছিলেন। এমনকি উপস্থিতি ও বেরিয়ে যাবার সময়ও মেনে চলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এরপর একদিন হঠাৎ বায়োমেট্রিক মেশিন ভাঙা অবস্থায় দেখতি পেয়েছি। এরপর থেকে এভাবেই চলছে। এটি আর ঠিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের ন্যায় এখানেও কেনা হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়ে তৎকালীন শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন সুনিশ্চিত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। তবে এবিষয়ে তদন্ত করলে সুস্পষ্ট ভাবে জানা যাবে।

Loading

শেয়ার করুন