গঠিত হোক জনতার সরকার

মুসাদ্দেক আল আকিব : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনটি এক পর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। সে আন্দোলনে সৃষ্টি হয় গণঅভ্যুত্থানের। ছাত্রদের আহবানে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের জনসাধারণ গণঅভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করে। সূচনা হয় নতুন এক বাংলাদেশের। জনমুখে উচ্চারিত হতে থাকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। তবে শত সহস্র জীবনের বিনিময়ে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

গত ৫ ই আগস্ট (২০২৪) সোমবার শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পরপরই দেশ জুড়ে সূচনা হয় নতুন এক ধ্বংসযজ্ঞ। সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, এমনকি গণভবন, বঙ্গভবন, সংসদ ভবনসহ পরাজিত সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় লুটতরাজ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।

এছাড়াও দেশের কিছু কিছু জায়গায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দিরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পূর্বে এই সময়টিতে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানীরা এ ধরনের লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুর, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ভীতিকর এক ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার নেশায় মত্ত হয়ে উঠে।

এই ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটে বাদ পড়েনি সাধারণ মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এক ধরনের সিজনাল সুযোগসন্ধানী ডাকাত দল। যারা সাধারণ মানুষের বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ আজ নিজেদের জান-মাল রক্ষায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

এমন নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নেই পুলিশ। পুলিশের উচ্চ পদস্থ কিছু সুবিধাভোগি কর্তা এবং মাঠ পর্যায়ে তাদের দোসরদের কর্মকাণ্ডে বিগত সরকারের পেটোয়া বাহিনীর তকমা লেগে যায় পুরো পুলিশ প্রশাসনের গায়ে। ফলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে জনসাধারণের রোষানলে পড়ে তারা। এতে করে দেশ প্রেমিক সাধারণ পুলিশ সদস্যরা আজ নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কারণে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছে।

তবে সারা দেশে নিয়োজিত সীমিত সংখ্যক সেনা সদস্যরা সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সমন্বয় করে জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ নিজেরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পাড়া মহল্লায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সামান্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাত জেগে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরসহ মানুষের জান মাল রক্ষায় পাহারা দিচ্ছে শিক্ষার্থী সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা ও আলেম-ওলামা এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।

এদিকে জনজীবনে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখনো সারাদেশে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং সরকারি বিভিন্ন অফিসসমূহে এখনো বন্ধ রয়েছে নাগরিক সেবা কার্যক্রম। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে দেশের অর্থনীতি। ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন।

অপরদিকে জনসাধারণ ও সমাজের বিশিষ্টজনরা বলছেন এ অবস্থা বেশি দিন দীর্ঘায়িত হলে বিপুল পরিমাণ জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। পাশাপাশি সারাদেশে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়বে।

বিজ্ঞ মহলের দাবী নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দলীয়করণের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে যতগুলো সরকার গঠিত হয়েছে, কোন সরকারই নিজেদেরকে জনতার সরকার হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই ২০২৪ সালের এই গণঅভ্যুত্থানের পর যে সরকার গঠিত হয়েছে তা যেন হয় জনতার সরকার।

এমতাবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন গঠিত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনতার সরকার হিসেবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। না হলে দেশের জনগণ ও বিশ্ব মহলে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়বে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরু হবে গন্তব্যহীন বাংলাদেশের পথ চলা। যা কারোরই কাম্য নয়।

বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায়

Loading

শেয়ার করুন