বাংলাদেশে বড় ধরনের একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিলো

মিজানুর রহমান রানা : দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে বড় ধরনের একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিলো, এটা জাতি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা উপলক্ষ মাত্র, এটা অনিবার্য ছিলো যে, যে কোনো সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেপরোয়া হয়ে উঠে। এটা আমরা এরশাদ সরকারের আমল থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। যার জন্যে এরশাদ সরকারের শোচনীয়ভাবে পতন হয়েছিলো।

গত ১৮ বছরের শাসনামলেও তাই ঘটেছিলো। কাউকে তোয়াক্কা না করে একচেটিয়া নির্বাচন, সাধারণ মানুষের মনমানসিকতা বুঝতে না পারা, জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি, দম্ভ, অহঙ্কার, মানুষকে মানুষ মনে না করা এগুলো যে কোনো সরকারের জন্যেই ছিলো মহাভুল। আর এ ভুলের খেসারত বা পরিণতি আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দেখে এসেছি বিভিন্ন দেশে।

জাতিকে একটা মোহের মধ্যে আবদ্ধ রেখে, জাতির বাকস্বাধীনতা হরণ করে, সাংবাদিকদেরকে ভয় দেখিয়ে করায়ত্ব করে নিজেদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা এটা যে কোনো সরকারের জন্যেই বুমেরাং হতে পারে তা গত ৫ আগস্টের ঘটনাই প্রমাণ করিয়ে দিলো।

ছোট ছোট বালুকণা বিরাট বালুচর গড়ে তোলে। আর বিন্দু বিন্দু জল যে মহাসাগরের সৃষ্টি করে তা কারোরই অজানা নয়। তাই যে কোনো ক্ষত বা সমস্যা ছোট থাকতেই তা মিটিয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ, না হলে এই সমস্যা ও ক্ষত ধীরে ধীরে বড় হয়ে গ্যাংগ্রিনে রূপান্তর হয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো স্থানটিই কেটে ফেলে দিতে হয়। এটা আমরা চাক্ষুষ করলাম।

শুরুটা হয়েছিলো ছোট একটি আব্দারকে কেন্দ্র করে। সেটা ছিলো ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। সামান্য দাবি, সামান্যই মাত্র বাকস্বাধীনতার অধিকার। কিন্তু কি হলো? প্রধানমন্ত্রী যদি তাদেরকে গণভবনে ডেকে নিয়ে তাদের কথা শুনে বলতেন, ঠিক আছে আমি আগামী রোববারের মধ্যে তোমাদের দাবিগুলোর প্রতিকার করে দিচ্ছি তাহলেই তো সমস্যা মিটে যেতো। কিন্তু এর বিপরীতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বুলেট বিদ্ধ করে পুরো দেশটাকেই জাগিয়ে দেওয়া হলো।

এই সামান্য দাবি, সামান্য অধিকারের জন্যে নির্বিচারে দমন-পীড়ন তো এরশাদ সরকারের কথা, ইয়াহিয়া ভুট্টোর কথাই তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়তে পড়তে, জীবনযুদ্ধে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার হতে শিখেছিলো। তারা দেখেছে এরশাদ সরকারের আমলে ডা. মিলনের আত্মত্যাগ, তারা দেখে একটি মাত্র মেয়ে যার নাম ছিলো ‘ইয়াসমিন’ তাকে ধর্ষণের কারণে তখনকার সময় বিএনপি সরকারের পতন হয়েছিলো। এই ইয়াসমিনকে ঘিরে সারাদেশে আওয়ামী লীগ কালো পতাকা ও অসহযোগ আন্দোলন করে বিএনপি সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছিলো। আর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসনে বসেছিলো, ক্ষমতায় গিয়ে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফেলে দিয়ে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন বাদ দিয়ে নিজেরাই একচেটিয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় আরোহন করতে থাকে।

তাছাড়া সরকারকে টিকিয়ে রাখতে, সরকার নিজে টিকে থাকতে সার্বিকভাবে সরকারের সব ধরনের বিভাগকে দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছিলো। বাংলাদেশেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে গিয়ে, পদ্মা সেতু তৈরি করতে গিয়ে জনগণের মাথায় যে অতিরিক্ত ট্যাক্স বা করের বোঝা চাপানো হলো তাতে জনগণ ধীরে ধীরে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে লাগলো। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কিন্তু জনগণের আয় না বাড়িয়ে আমলাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা, বেতনভাতা বাড়তেই থাকে। আর এসব করতে গিয়ে জনগণের ভোগ্য প্রতিটা জিনিসপত্রের উপর ট্যাক্স বসতে থাকে। যেমন- মোবাইলের কলরেট ডাবল হয়েছে, স্কুল কলেজের ফি বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, ২ টাকার সিগারেট ১৩ টাকা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে, আমলারা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে নিয়ে চলে গেছে। এসব বিষয় জনগণের মনকে বিষিয়ে তুলছে। জনগণ সত্যিই এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে।

এ ছাড়া দেখা গেছে কোটা পদ্ধতিতে কম মার্ক পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা বেশি মার্ক পাওয়া সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে এগিয়ে গিয়ে চাকুরি হয়েছে অথচ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের চাকুরি হচ্ছে না। যারা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিচ্ছে তাদের চাকুরি হয়ে যাচ্ছে, আর মেধাবীরা বেকার বসে থেকে সার্টিফিকেট পোড়াচ্ছে অথবা আত্মহত্যা করছে নীরবে মনের দহনে।

শুধু তাই নয়, গত ১৮ বছরে প্রশাসনের রন্দ্রে রন্দ্রে বিশাল দুর্নীতির হোলিখেলা চলেছে। নাম্বারবিহীন সিএনজি, স্কুটার থেকে যেমন মাসে মাসে মাসোহারা খেয়ে একটা টিকিট দিয়ে চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে তেমনি প্রশাসনের প্রতিটা সেক্টরেই ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব আমরা দেখেছি। এতে সাধারণ মানুষ ত্যাক্ত বিরক্ত ছিলো দীর্ঘদিন থেকেই। তাছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের নামে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যে অপশিক্ষা, কুশিক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই অভিভাবকরা মেনে নিতে পারেনি। ৬ষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাড়ে যে বইয়ের বোঝা সরকার তুলে দিয়েছিলো তাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা চলছিল। কোনোমতেই সরকারকে এ অবস্থা বুঝানো যায়নি। শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা জগাখিছুড়ি পাকিয়ে দিয়েছিলো। তাছাড়া তাদের নেতাকর্মীরা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলো যে, নদীর বালু থেকে সবকিছু তাদের নিজস্ব সম্পদ মনে করে সাংবাদিকদেরকেও হয়রানি, হামলা মামলা দিয়ে নাজেহাল করা শুরু করে দিয়েছিলো। যা মানুষ এখনও ভুলতে পারেনি। ধীরে ধীরে এসব বিষয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তা সরকার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলো।

তারই প্রতিফলন দেখলাম আমরা গত ৫ আগস্টে। কোনোভাবেই ছাত্র-জনতাকে বন্দুকের নিশানা থেকে সরানো যায়নি। এ যেনো এক নির্ভিক অভিনব চিত্র, যা স্বাধীনতার এতো বছর পর মানুষ দেখে সত্যিই হতবাক হয়ে গেছে আর এরপর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে আনন্দ উল্লাস করেছে।

তবে এই আনন্দ উল্লাস ক্ষণিকের মাত্র, এটা আসলেই আমাদের অজানা নয়। কারণ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, তারা- যারা লংকায় যায়, তারাই রাবণ হয়ে যায়- নীতি পালনের চেষ্টা করে। যদি সত্যি সত্যিই পরবর্তী সরকার সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যাতনা, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির দিকে নজর দিতে পারে, তাহলে সাধুবাদ। আর না হলে এ আত্মত্যাগ ‘যেই লাউ সেই কদু’তেই পরিণত হবে।

মঙ্গলবার, ০৬ আগস্ট ২০২৪

শ্বেতির সাদা দাগ দূর করার সহজ কিছু উপায়

পুরুষাঙ্গ থেকে পূঁজ পড়ার কারণ ও প্রতিকার

৩০ দিনের মধ্যে মোটা হওয়ার উপায়

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

Loading

শেয়ার করুন