আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস : সবার উচিত চোখের প্রতি যত্ন নেওয়া

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

আজ বৃহস্পতিবার ১৩ অক্টোবর, বিশ্ব দৃষ্টি দিবস ২০২২। প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব দৃষ্টি দিবস পালন করা হয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্ধত্ব এবং চোখের বিকলতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পুরো বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। ২০০০ সালে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক অনুষ্ঠিত সাইট-ফার্স্ট-ক্যাম্পেইনের ফলশ্রুতিতে এই দিবসের শুরু হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় আন্তর্জাতিক অন্ধতা দূরীকরণ সংস্থার পরিচালনায় এই দিবসটি বহুল ভাবে প্রচারিত হয়ে ভিশন ২০২০ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। , ২০১৪ সালে বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের বিষয়বস্তু ছিল- ‘আর নয় অবজ্ঞাপূর্ণ অন্ধতা’। এটা ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইএবিপি) জানিয়েছে, অন্ধত্বের ৭৫ শতাংশ এবং গুরুতর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বিশ্ব দৃষ্টি দিবস প্রত্যেকের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করে, যেখানে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদেরকে ‘সংহত লোককেন্দ্রিক চক্ষু যত্ন’ সেবা গড়ে তুলতে জোর দিতে পারবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে দৃষ্টিশক্তির উপর প্রথম প্রতিবেদনটি চালু করেছিল। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে কমপক্ষে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা অন্ধ, তার মধ্যে এক বিলিয়ন মানুষের ক্ষেত্রে যাদের গ্লোকমা বা ছানির মতো সমস্যা হয়েছিল, তারা যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেতেন তাহলে এই অবস্থা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।

৭৪ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে (ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেমব্লি) প্রতিরোধ, প্রাথমিক শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্তরের সঙ্গে চোখের চিকিৎসা সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব দিয়েছে। জনগণ যাতে তাদের বাড়ির কাছাকাছি এই পরিষেবাগুলি পায়, সেদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে।

চোখের যত্নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়কেই আরও সচেতন হতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা রোধ করা এবং মোকাবিলা করা কেবল জীবনের মান উন্নত করে তাই নয়, মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী থাকতেও সাহায্য করে।

অন্ধত্ব এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা নিবারণে জাতীয় কর্মসূচি, ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৬ সালে এটি চালু হয়েছিল। আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, ডা.এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন… চোখ আমাদের চেহারার সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ এবং মূল্যবান অঙ্গ। এক জোড়া সুন্দর চোখ একজন মানুষকে করে তুলতে পারে আকর্ষণীয়। চোখ হচ্ছে মনের আয়না, চোখ মনের কথা বলে। তাই আমাদের সবার উচিত চোখের প্রতি যত্ন নেওয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন রোগ এবং অযত্নের কারনে আমাদের ও চোখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তাহলে আসুন আমরা চোখের রেটিনা সম্পর্কে জানবো..একটা বয়সের পর থেকে শরীরের সব অঙ্গই ধীরে-ধীরে দুর্বল হয়। যত বয়স বাড়ে তত ক্ষয় বাড়ে। যেমন দাঁত পড়ে যায়, ত্বক কুঁচকে যায়, চুল পাতলা হতে থাকে ইত্যাদি। ঠিক একই ভাবে দুর্বল হয় দৃষ্টিশক্তি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে থাকে যা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছদৃষ্টিতে। এমনই একটি সমস্যা রেটিনাল ডিজেনারেশন।

এই সমস্যায় ভুগছেন পৃথিবীর বহু মানুষ। এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের মানুষও। অনেকেরই ধারণা রেটিনাল ডিজেনারেশন জন্ম দেয় অন্ধত্বের! ‘‘ডিজেনারেশন মানে ক্ষয়। এখন মানুষের আয়ু বেড়েছে। তাই শরীরের ক্ষয়জনিত সমস্যাও বেশি। যত বেশি বাঁচবে তত ক্ষয় হবে। রেটিনাল ডিজেনারেশন সেরকমই একটা সমস্যা। যার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে। তবে এই ক্ষয় হলেই যে অন্ধ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা সারিয়ে তোলা যায়। আর রেটিনা হলো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অক্ষিগোলকের পেছনের দিকে অবস্থিত স্নায়ুকোষযুক্ত একটি পাতলা আলোকসংবেদী স্তর। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অংশ রেটিন হলো চক্ষু লেন্সের পেছনের দিকে অবস্থিত অক্ষিগোলকের ভিতরের পৃষ্টে গোলাপী রঙের ইষদচ্ছ আলোকসংবেদন আবরণ। রেটিনা রড ও কোণ নামক কতগুলি স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা গঠিত । রেটিনার ওপর আলো পড়লে তা স্নায়ুতন্ত্রে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে ফলে মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগে । রেটিনা ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে, ফটোরেসেপ্টরের মাধ্যমে চিত্রটি ক্যাপচার করে।

চোখের একটি স্পর্শকাতর জায়গা হলো রেটিনা। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি, হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি, রেটিনা ডিটাচমেন্ট ইত্যাদি রেটিনার বিভিন্ন সমস্যা।

সাধারণত চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস চশমা দ্বারা উন্নতি না হলে, আঘাতজনিত কারণে চোখে কম দেখলে, চোখের সামনে কালো কিছু ভাসতে থাকলে, চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখা দিলে, চোখে কালো পর্দার মতো কিছু পড়তে দেখলে এবং কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ করে কমে গেলে রেটিনাজনিত চোখের সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে রেটিনার জন্য দৃষ্টিশক্তি কমলে চোখে কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না।

> রেটিনার কাজ কী ?
রেটিনার কাজ হল-
১) বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করা ।
২) আলোক গ্রাহক হিসেবে কাজ করে উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে ।
কর্নিয়া কি বা কর্নিয়া কাকে বলে ?চোখের শ্বেতমন্ডলের সামনের অংশ যা স্বচ্ছ এবং বাহিরের দিকে কিছুটা উত্তল তাকে চোখের কর্নিয়া বলে। অর্থাৎ কর্ণিয়া হলো চোখের স্বচ্ছ অংশ যা চোখের সামনের অংশটি আচ্ছাদন করে রাখে।কর্নিয়াতে কোন রক্তনালী না থাকাটা এর স্বচ্ছ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। স্বচ্ছতার কারণে এর ভেতর দিয়ে আলো চোখের ভেতরে প্রবেশ করে এবং পেছনের রেটিনার ওপর পড়তে পারে। তখন আমরা কোন বস্তুকে দেখতে পাই। কর্ণিয়া আলোক রশ্মি প্রবেশে সাহায্য করে। কর্নিয়া প্রোটিন এবং কোষ সমন্বয়ে গঠিত।
আর বয়স যখন ষাট পেরিয়ে যায়, কর্মজীবনের ব্যস্ততা আর কোলাহল স্তিমিত হয়ে আসে, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তখন কিছু কিছু অনিবার্য পরিবর্তন শুরু হয় আমাদের শরীরে, দেহের কোষে কোষে। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ করবার ক্ষমতা কমে যায়, কমে যায় শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। আর তখনই নানা রোগব্যাধি গুটিগুটি পায়ে বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে। এই সময়ে চোখের যে অসুখগুলি মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন , গ্লুকোমা, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ড্রাইআই আর ক্ষীণদৃষ্টি। ম্যাকুলার ডিজেনারেশনে রেটিনার কোষগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে, যার ফলে দৃষ্টি একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যায়। এর চিকিৎসা বেশ জটিল আর ফলাফল অনিশ্চয়তায় ভরা। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে গ্লকোমার চিকিৎসা খুবই সন্তোষজনক। তবে গ্লকোমার ওষুধ সারাজীবন ব্যবহার করে যেতে হবে।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে, রক্তের স্যুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, উপযুক্ত চিকিৎসায় এই অসুখ থেকে অন্ধত্বকে রোধ করা যায়। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির বাড়াবাডি অবস্থায় প্রায় আর কিছুই করবার থাকে না। ড্রাইআই অসুখটি খুব বিরক্তিকর হলেও, চিকিৎসায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া সম্ভব।

ক্ষীণদৃষ্টি বা ল্যো-ভিশন সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এই অসুখে বইয়ের লেখা পড়া বা লেখালেখি করা, যা বয়স্ক লোকেদের অন্যতম অবলম্বন, তা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশার কালো ছায়া। কিন্তু এই অসুখের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, এক্ষেত্রে রেটিনার নার্ভকোষগুলি এতই দুর্বল হয়ে যায় যে, সেগুলিকে আর পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বা নানা ধরনের ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসের সাহায্যে লেখাপড়ার কাজ চালানো হয়।

> ষাটোর্ধ্ব বয়সে চোখ ভালো রাখবার উপায় :

১. ডায়াবেটিস থেকে সাবধান:-
একথা প্রমাণিত যে, ডায়াবেটিস অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। আর ৬০ বছর বয়সের পরে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এছাড়া স্থূলত্ব, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার, পরিবারে অন্যান্য সদস্যদের ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণে রক্তের চিনির (শর্করা) মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের সূত্রপাত হয়। এই রোগে চোখের রেটিনার সূক্ষ্ম রক্তজালিকা থেকে রক্তপাত শুরু হয়। রেটিনার নানা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে তোলে। এই অবস্থার নাম ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রাথমিক অবস্থায় রোগী কিছুই বুঝতে পারেন না। দৃষ্টির কোনও সমস্যাই থাকে না সেই সময়ে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রোগটা জটিল হয়ে ওঠে এবং রোগী যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, ততদিনে দৃষ্টির যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং ৬০ বছর বয়সের পরে (বা তার আগে) ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকা জরুরি।

২.ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন :
ডায়াবেটিসের মত হাই ব্লাড প্রেশারও চোখের শত্রু। এর ফলে রেটিনার রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং যথেষ্ট পরিমাণে রক্তের অভাবে রেটিনার আলোক সংবেদী কোষগুলির কর্মক্ষমতা কমে যেতে থাকে। হাই ব্লাডপ্রেশারের দোসর রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশী থাকলে জমাট বাঁধা রক্ত রেটিনার রক্তনালীর ভিতরে আটকে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। একে চোখের স্ট্রোক বলা হয়। চোখের স্ট্রোকে দৃষ্টি ক্ষমতা মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণ অন্ধত্ব নেমে আসে। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই আগেকার দৃষ্টি আর ফিরে আসে না। পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত জলপান, খাবারে লবণের আধিক্য, ধূমপান, মদ্যপান, শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা, অনিয়মিত জীবনযাপন ইত্যাদি হাই ব্লাডপ্রেশারের কারণ। তাই ৬০ বছর বয়সের পরে মাঝে মাঝেই ব্লাডপ্রেশার আর রক্তের সুগার ও লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করা উচিত।

> দৃষ্টির সতর্কতামূলক পরিবর্তনগুলি খেয়াল রাখুন :-

চোখের অনেক জটিল অসুখের সংকেত বা লক্ষণ আগেই পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা প্রথমে সেগুলিকে পাত্তা দিই না। চোখের এই মারাত্মক অসুখের প্রাথমিক রোগ লক্ষণগুলিকে যথাযত গুরুত্ব দিলে অনিবার্য অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সুতরাং নীচের লক্ষ্মণগুলি দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

১. ডাবল ভিশন : ছানি, মস্তিষ্কের নার্ভের পক্ষাঘাত চোখের স্ট্রোক, , ব্রেন টিউমার ইত্যাদি অসুখে কোনো কিছু দেখবার সময়ে একটা জিনিসকে দুটো দেখায়।

২. ঝাপসা দৃষ্টি : ছানি, গ্লকোমা, কর্নিয়ার ঘা, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ইত্যাদি অসংখ্য কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। এক্ষত্রে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩. অল্প আলোয় দেখার অসুবিধা : ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, গ্লকোমা, রেটিনার রক্ত চলাচল-জনিত সমস্যা ইত্যাদি অসুখে অল্প আলোয় দেখতে সমস্যা হয়।

৪. চোখের ব্যথা : আইরাইটিস, গ্লকোমা, কর্নিয়াল অ্যাব্রেশন চোখে ধুলোবালি বা কোনো বাইরের বস্তু (ঢুকে গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

৫. লালা চোখ : কনজাংটিভাইটিস, অ্যাকিউট গ্লকোমা, কনজাংটিভার হেমারেজ, আইরাইটিস ইত্যাদিতে চোখ লাল হয়ে যায়।

৬. আলোর ঝলক : চোখের সামনে বিদ্যুৎ চমকের মত আলোর ঝলক দেখতে পেলে, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে দেখিয়ে রেটিনার সামগ্রিক পরীক্ষা করা দরকার। নতুবা রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হয়ে চোখে চির- অন্ধকার নেমে আসতে পারে।

৭. ফ্লোটার বা কালো কালো বিন্দু : চোখের সামনে মাছির মত কালো কালো বিন্দু ঘোরাফেরা করে। এদের চোখের মাছি বা ফ্লোটার বলে। বয়সের কারণে চোখের ভিট্রিইয়াস পাতলা হয়ে গেলে ফ্লোটার দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি থেকে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু কখনও কখনও এটি রেটিনাল ডিটাচমেন্টের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। তাই সাবধানের মার নেই ।

> দৃষ্টি শক্তি কমে গেলে বৃদ্ধির জন্য ঘরোয়া পরামর্শঃ-

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার দিকে নজর রাখুন। পুষ্টিকর সুষম আহার চোখের সুস্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, খাবারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছানি ও রেটিনার অন্যান্য অসুখে খুবই উপকারী। ফলমূল ও টাটকা শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এছাড়া ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের সম্ভাবনাকে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। মাছ এর অন্যতম উৎস। সুতরাং রোজকার খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, ফল এবং মাছকে স্থান দিতে হবে। আর অবশ্যই নিজের আহারটি রোজই নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করতে হবে।আর চোখের সবচে বড়ো সমস্যা হলো দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া এর ফলে আমাদের নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর সকলের দৃষ্টি শক্তি কমে যায় ৪০ বছর বয়সের পরথেকে এই সমস্যা টি দেখা যায়। তবে কিছু জিনিস ঠিক মতো ব্যবহার করলে এর প্রকোব থেকে বের হওয়া যায়। সেগুলি হলো :-
১. প্রতিদিন সকালে ২ চামচ হেলেঞ্চার রস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে দৃষ্টি শক্তি হ্রাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
২. ডিমে থাকা উপকারী পদার্থ শরীরে লুটেইন, জিয়াক্সেনথিন এবং জিঙ্কের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এই উপাদানগুলি চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে দারুন ভাবে সাহায্য করে থাকে।
৩. ডিমের সাদা অংশ ছাড়াও সবুজ শাক-সবজিতেও থাকে প্রচুর লিউটিন। চোখের জ্যোতির জন্য ক্ষতিকর খাবারেরও একটি তালিকা দিয়েছেন পুষ্টিবিদ্যমান যেসব খাদ্য কম খাওয়া উচিত অথবা পরিহার করা উচিত তা হচ্ছে সুগার, প্রক্রিয়াজাত ময়দা, ট্রান্সফ্যাট (বনস্পতি) ও ধূমপান।
৪. মৌসমি লেবু, কমলা লেবু এবং পাতি লেবু বেশি করে খাওয়া শুরু করুন। এই সব ফলে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিগুলো ছানি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি ঘটে।
৫. স্নায়ুবিক, দুর্বলতা,অতিরিক্ত মাদকদ্রাব পান,অল্প আলো তে পড়াশোনা করা,জোরালো মোবাইল ও টিভির আলোর দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। হেলেঞ্চে ভাতে ও কলমি শাক ভাতে প্রতিদিন দুপুরে গরম ভাতে সেবন করতে হবে।
৬. সবুজ শাক ও সবজি বর্তমান প্রজন্মে অনেকেই তেমন একটা পছন্দ করেন। কিন্তু শাক না খেলে চোখের স্বাস্থ্যের তেমন উন্নতি ঘটেনা। আর চোখে যদি দৃষ্টিশক্তি ভালোনা থাকে, তাহলে নানা সমস্যার স্মুখীন হতে হয় অনেক সময় অন্ধত্ব ও দেখাদিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা অনেকেই চশমা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু চশমার ব্যবহার টাই মূল সমাধান নয়। কেননা বয়স যত বাড়তে থাকে ততো চোখের দৃষ্টিশক্তি ও কমতে থাকে।তাই নিয়ম করে প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। কারণ সবুজ শাক-সবজি তে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিজেন এবং জিয়েক্সেনথিন নাম বেশ কিছু উপকারী ভিটামিন উপাদান থাকে। এই সমস্ত উপাদানগুলি ছানি ছাড়া ও চোখের নানা রোগ থেকে আমাদের কে মুক্তি দিতে পারে।
৭. এলাচ ৪ গ্রাম মাত্রায় সকালে খেলে এক মাস থেকে ৪০ দিনের মধ্যে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি দূর হয়। চোখ ঠাণ্ডা হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
৮. রাতের বেলায় একটা পাত্রে দু’চামচ ত্রিফলা চূর্ণ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে ঐ জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন অথবা ঐ জল নিয়ে চোখের ওপর ছিটে দিন।এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে, বৃদ্ধাবস্থাতেও চোখ নির্মল ও সতেজ থাকবে।
৯. পুষ্টিবিদগণের মতে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন ও লিউটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রধানত আসে মাছ থেকে। এছাড়া ফ্লাক্স সিডস, ওয়ালনাটস, পেশতা ও বাঁধাকপিতে পাওয়া যায় এধরনের চর্বি। আর বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় গাজর এবং সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলে। লিউটিন পাওয়া যায় ডিমের সাদা অংশে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এই লিউটিন সহায়ক।
১০. যদি দেখা যায় চোখের দৃষ্টি ক্রমশঃ স্তিমিত হয়ে আসছে তাহলে কমলা লেবুর রসে বাটা গোলমরিচ ও সৌন্ধব লবণ মিশিয়ে সকাল-বিকাল সেবন করতে হবে। অন্ততঃ তিনমাস এভাবে নিয়মিত সেবন করতে হবে।এতে উপকার পাওয়া যাবে।
১১. শোয়ার সময় সপ্তাহে তিন দিন তুলোর মোটা পলতে দুধে ভিজিয়ে চোখে রেখে তার ওপর পটি বেঁধে দিলে চোখ ভালো থাকে। আবার কখনো কখনো ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা শীতল ও স্বচ্ছ দুধ দু’তিন ফোঁটা চোখে দিলে চোখ শীতল থাকে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কখনো ক্ষীণ হয় না ও চোখ সুস্থ সবল থাকে।
১২. বাদামের ৮-১০ টি দানা (অর্থাৎ শাঁস) রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে খানিকটা দুধ খেয়ে নিতে হবে। এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ার সঙ্গে বলবৃদ্ধিও হবে। ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
১৩. ধনে পিষে নিয়ে তার রস বের করে দু’ফোঁটা করে প্রতিদিন দু’চোখে দিলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয় বলে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে।
১৪. এক কাপ গাজরের রসে পৌনে এক কাপ পালং বা চৌলাইয়ের শাকের রস মিশিয়ে সকালে সূর্যোদয়ের সময়ে এবং বিকালে সূর্যাস্তের সময়ে নিয়মিত সেবন করতে পারলে সেবনকারীর চশমার দরকার পড়বে না কোনো দিন।
> পরিমিত শরীরচর্চা :
কর্মজীবন থেকে অবসর নেবার পরে অনেকেই একটু আলসে বা কুঁড়ে হয়ে যান। এর ফলেই শরীরে নানা সমস্যা বাসা বাঁধে। নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ, পরিমিত শরীরচর্চা সমস্ত শরীরে এবং চোখে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। এজন্য ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও অন্যন্য বার্ধক্যজনিত চোখের অসুখগুলির সম্ভাবনাও প্রায় ৭০% কমে যায়।
> হোমিওসমাধানঃ–
কোনো ব্যক্তির ‘মন’ সরবরাহকৃত লক্ষণ দ্বারা হোমিওপ্যাথিতে আশ্চর্যজনক ভাবে চোখের অনেক সমস্যা সমাধান হয়। চোখ শরীরের সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা পরিচর্যার জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথ দরকার। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীকে হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করার সময়, চোখের সমস্যায় কি কি লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে তা সম্পূর্ণ সংগ্রহ করে সঠিক মেডিসিন নির্বাচনে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়। চোখের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে হোমিওপ্যাথিতে অনেক ওষধ আছে। যাইহোক, প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত চোখের ছানি , গ্লোকোমা, পৌনঃপুনিক নেত্রপ্রদাহ, কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার , এবং পৌনঃপুনিক অঞ্জনী মত চোখের সমস্যার জন্য, ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সার্বদৈহিক বৈশিষ্ট বিবেচনা করে গঠনগতভাবে নিখুঁত রোগীচিত্র তৈরীর মাধ্যমে সঠিক ওষুধ নির্বাচনের রোগারোগ্য সম্ভব । বিশেষভাবে, বৈচিত্রময় চোখের সমস্যার জন্য সুন্দর ফলাফল পেতে নিম্নে প্রাথমিক লক্ষণের উপর নির্ভর করে কয়েকটি ওষুধের লক্ষণের সঙ্গে পরিচিত করা আবশ্যক মনে করছি।(১)ইউফ্রেসিয়া -তীব্র শ্লেষ্মা নেত্রপ্রদাহ ।
– চোখ ঘন ঘন পানি আসে এবং চোখ মিটমিট করার প্রবণতা থাকে. চোখ থেকে জ্বালাকর স্রাব বের হয়, যাতে চোখের পাতার প্রান্তে ক্ষত হয়ে যায়।
– কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার সাথে জ্বালাকর ঘন স্রাব নিঃস্বরণ হয়।
– কর্নিয়ায় ফুস্কুড়ি বা স্ফুটক হয়।
– বাতজনিত কারণে চোখের আইরিস প্রদাহসহ আংশিকভাবে চোখের পাতা প্যারালাইসিস এর ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে ভাল একটি অষুধ।
– প্রায় সবসময়ই চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরতেই থাকে।
– চোখের পাতা ফোলাসহ জ্বলা থাকে, যা খোলা বাতাসে ভাল অনুভব করে।
– সন্ধ্যায়, গৃহমধ্যে , আলো, উষ্ণতায় বৃদ্ধি।
– মুক্ত বাতাস , কফি পানে, অন্ধকারে হ্রাস পায়।
– নেত্রপ্রদাহ সঙ্গে যুক্ত এলার্জিক রাইনাইটিস এর ক্ষেত্রে চোখ ও নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরাকে এলিয়াম সেপা সঙ্গে তুলনা করা যায়।
(২) অ্যামব্রোসিয়াঃ-
– এলার্জিজনিত চোখের সমস্যা।
– চোখের পাতায় অসহনীয় চুলকানি।
– চোখে হালকা ব্যথা এবং জ্বলাসহ পানি ঝরতে পারে এবং নাক থেকে রক্ত আসতে পারে।
– প্রায় সবসময় চোখের সমস্যার সঙ্গে বুকে সাঁইসাঁই শব্দসহ কাশি থাকে।
– স্যাবাডিলা আরন্ডো সঙ্গে তুলনা করা যায়।
(৩)রুটাঃ-
– চোখ টনটনানিসহ মাথাব্যথা।
– চোখে ব্যথাসহ লালচে গরম পানি আসে।
– বিশেষ করে সূক্ষ্ম মুদ্রণ সেলাই বা পড়ার সাথে সম্পৃক্ত।
– দৃষ্টিশক্তির সামঞ্জস্যের সমস্যা।
– মাথা ব্যাথা সঙ্গে চোখ শ্রান্তি।
– চোখের যন্ত্রণার সঙ্গে যুক্ত অত্যধিক দুর্বলতা ।
– চোখের উপর থেতলানো মত এবং চাপ অনুভূতি।
– নেট্রাম মিউর , আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম এর সঙ্গে তুলনীয়।
(৫)পালসেটিলাঃ-
– পালসেটিলা চোখের যন্ত্রণার জন্য হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে অমূল্য একটি ওষুধ।
– চোখ থেকে অহেজাকর, ঘন, হলদে এবং সবুজাভ স্রাব নিঃস্বরণে এটিকে মনে রাখা উচিত।
– চুলকানি এবং জ্বালা অনুভুতি এর সঙ্গে যুক্ত।
– পৌনঃপুনিক অঞ্জনীতে ওষুধ সেবনকালীন অবশ্যই এর একটি ডোজ প্রয়োজন।
– চোখের উপর পাতায় প্রদাহিত শক্ত গুটি থাকতে পারে।
– তীব্র নেত্রপ্রদাহের সাথে হজমজনিত সমস্যা থাকে।
– লক্ষণ সর্বদাই পরিবর্তনশীল, সেটা রোগজ হোক আর মানসিক হোক।
– স্কন্ধ এর শিরা বৃহদাকার।
– সব সমস্যা উষ্ণ রুমে খারাপ এবং খোলা বাতাসে ভাল।
(৫) স্পিগেলিয়াঃ-
– চোখে স্নায়ুবিক যন্ত্রনা।
– চেপে ধরা মত ব্যথা যা এদেরকে ঘুরিয়ে ফেলে।
– চরম আলোকাতঙ্ক থাকে।
– গাঁটের ফোলা ও ব্যথাসহ চোখের প্রদাহ।
– চোখের মধ্যে গভীরে এবং চোখের চারপাশে ব্যাথা অনুভব অর্থাৎ চোখের বলে চাপ দেওয়া মত অসহ্য যন্ত্রনা।
– চোখের কোটরের অনুপাতে চোখ খুব বড় মনে হয়।
– স্পর্শে অত্যন্ত সংবেদনশীল, মাথার চারপাশে শক্ত বন্ধনী দেওয়া আছে মনে হয়।
– স্পর্শ, উত্তেজনা, গোলমাল বা কোলাহলপুর্ণ পরিবেশে এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি।
– মাথা উচু করে শুয়ে থাকলে ভাল অনুভব করে।
(৬) এপিস মেলিফিকাঃ –
– জ্বালাযুক্ত ও চুলকানিসহ ফোলা এবং নিচের পাতায় শোথ ( উপরের পাতায়- কেলি কার্ব)।
– চোখ উজ্জ্বল লাল ফোলা থাকে।
– অঞ্জনীর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে।
– অক্ষিগোলকে ব্যথাসহ পাতলা তরল নিঃস্বরণ হয়।
– শোথ থাকে কিন্তু পিপাসাহীন ( শোথ কিন্তু পিপাসা থাকে-এপোসাইনাম, এসেটিক এসিড)।
– প্রস্রাবে সমস্যার সাথে চোখের সমস্যা থাকে।
– তাপ , স্পর্শ , চাপ, ডান দিকে বৃদ্ধি।
– ঠান্ডা পানিতে ধোওয়া , মুক্ত বায়ুতে হ্রাস।
(৭) মারকুরিয়াস সালঃ-
– উপদংশ রোগী চোখের সমস্যা।
– চোখের পাতা মোটা , লাল, ফোলা।
– প্রচুর জ্বলন্ত হেজাকর স্রাব নিঃস্বরণ।
– অগ্নি ইত্যাদি একদৃষ্টি মরেছে পরে আরম্ভ চোখের সমস্যা।
– আইরিস প্রদাহসহ ঘন হেজাকর নিঃস্বরণ হয়।
– অত্যন্ত গন্ধযুক্ত চোখের স্রাব নিঃস্বরণ।
– চোখে এবং এর চারপাশে ফুড়া হয় যা থেকে হলুদ পূঁজ বের হয়।
– রাতে, ভেজা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, উষ্ণতায় বৃদ্ধি।
(৮) সিলিকাঃ-
– দিনের আলো চোখে ধারালো ব্যথা উৎপন্ন করে।
– চোখ বন্ধ বা চাপ প্রয়োগ করলে স্পর্শানুভুতি আরোও বেড়ে যায়।
– চোখের অগ্র অংশে পূঁজ তৈরী হয়, আইরিশ প্রদাহ।
– পড়ার সময় দৃষ্টি বিভ্রান্তের জন্য- সাজানো অক্ষরগুলো দৌড়াচ্ছে মনে হয়।
– চোখের পানিবাহিত নালী আক্রান্ত হয়।
– হোমিওপ্যাথিকভাবে নির্দেশিত হলে এটি কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার পরিষ্কার করে।
– অফিসে কর্মীদের মধ্যে চোখের ছানি।
– অমাবস্যা , ঠান্ডা বৃদ্ধি।
– উষ্ণতায় হ্রাস পায়।
(৯হিপার সালফঃ-
– কর্নিয়ার ক্ষত।
– পূঁজযুক্ত চোখের সমস্যা , আইরিস প্রদাহসহ অগ্র স্তরে বা কক্ষে পূঁজ।
– নেত্রপ্রদাহ সঙ্গে পূঁজপুর্ণ নিঃস্বরণ।
– চোখের পাতা এবং কঞ্জাংটিভাতে লাল এবং প্রদাহ হয়।
– অক্ষিগোলকে ব্যথা।
– চোখের অক্ষিকোটর ক্ষতবদ বেদনা।
– বস্তুসমূহ লাল এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত প্রদর্শিত হয়।
– দৃষ্টিক্ষেত্র অর্ধ-হ্রাস পায়।
– ব্যথা এবং পূঁজসহ অঞ্জনী।
– ঠান্ডা, স্পর্শ, ঠান্ডা আবহাওয়ায় বৃদ্ধি।
– উষ্ণতা , মাথা আবৃত রাখলে হ্রাস পায়।
(১০) এগারিকাসঃ-
– চোখের সামনে ফুল্কি উড়ার সঙ্গে দ্বিত্ব দৃষ্টি।
– চোখের পাতা এবং অক্ষিগোলক এর ঝাঁকুনি স্নায়ুতন্ত্রের বেদনাসহ চোখের যন্ত্রনা।পড়ার সময় অক্ষরগুলো নড়াচড়া করে, সাঁতার কাটছে বলে মনে হয়।চোখের পাতার ভিতর প্রান্ত লালচে ও প্রদাহ, জ্বালাকর ব্যথা, প্রান্ত শক্ত গুটির মত।চোখের যন্ত্রণা মাথাঘূর্নণ এবং বরফতুল্য ঠান্ডা মাথার সঙ্গে যুক্ত।খোলা ঠান্ডা বাতাসে বৃদ্ধি,তাই লক্ষণের উপর নির্ভর করে আরো অনেক মেডিসিন আসতে পারে তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ’র সাহায্য নিন।তাই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল চোখের যত্নের পরিষেবা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্ধত্ব এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করা।

লেখক, প্রতিষ্ঠাতা,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল, drmazed96@gmail.com
চেম্বার, মগবাজার মিডিয়া পাড়া ঢাকা

Loading

শেয়ার করুন