চাঁদপুর শহরে আইফোন থেকে স্যামসাং, হাত বদলে বিক্রি হচ্ছে চোরাই মোবাইল
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর শহরে অবাধে চলছে চোরাই মোবাইল কেনাবেচা। প্রশাসন নানা সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও চোরাই মোবাইল কেনাবেচার কারবারিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশের নানা ধরনের উদ্যোগে অপরাধ কমে আসলেও ‘চোরাই মোবাইল কেনাবেচা রোধে প্রশাসন অনেকটাই নীরব। দামি কোনো বিখ্যাত ব্র্যান্ড কিংবা অখ্যাত সস্তা ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন কিনতে চাইলে যে কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিপণিতে যাওয়ার কথাই ভাববেন। তবে এখন শুধু নামি-দামি শপিং মলেই নয়, চাঁদপুর শহরেই মিলছে যে কোনো দামি ব্র্যান্ডের পুরাতন মোবাইল ফোন।
সম্প্রতি চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে হর্কাস মার্কেটের মোবাইল মেলা দোকান থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর ৮৮টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট চুরি করেছে চোর চক্র। চুরি হওয়া ৪১ দিন পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হবিগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ থানার বিভিন্ন স্থান থেকে পরিত্যাক্ত
চুরিকৃত মোবাইলের ৪২টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকতা শাহরিন হোসেন। যার মূল্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। এরপর থেকে আবার চাঁদপুর শহরে চোরাই মোবাইল বেচাকেনার উপদ্রব্য বেড়ে গেছে।
শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা চাঁদপুর টাওয়ারের দ্বিতীয় তলার হোসেন এক্সচেঞ্জ গ্যালারি, ইস্টান টেকনোলজি, বিসমিল্লাহ টেলিকম, সাকিব মোবাইল এক্সচেঞ্জ, চায়না মোবাইল বাজার, এয়ার মোবাইল এক্সচেঞ্জের দোকানে গেলে যে কারও চোখ আটকে যাবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শত-শত নতুন পুরাতন মোবাইলের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা।
বিখ্যাত আইফোন থেকে স্যামস্যাং কিংবা হালের হুয়াওয়ে থেকে অপ্পো, হারিয়ে যেতে বসা নোকিয়ার বিভিন্ন মডেল কি নেই এই মার্কেটে! ডিসপ্লে ভাঙাচোরা বিভিন্ন মোবাইল থেকে শুরু করে ঝকঝকে নতুন সবই মিলছে সাশ্রয়ী দামে।
সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে এসব ফোন কেনাবেচার কারণে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অন্যদিকে গ্রাহকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া এসব মোবাইল রেজিস্ট্রেশনও করা যায় না। এতে করে মোবাইল চুরি হলে আইএইমইআই নম্বর না থাকার কারণে ফোন উদ্ধার করা যায় না। ক্রেতারা আইনগত ও প্রশাসনিক ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই সমস্ত দোকানগুলোতে রয়েছে আইফোন সেভেন, স্যামসাং, অপ্পু, আইটেল, শাওমি সবগুলোই দামি ব্র্যান্ডের ফোন। দামও জানালেন ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই।
এতো কম দামের কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কেটের এক ব্যাবসায়ী জানান, সেটের দাম শুনে বুঝে নেওয়া উচিৎ এগুলোর মধ্যে হয়তো সেল রিসিট, বক্স অথবা চার্জারের কোন ঝামেলা রয়েছে। এখান থেকে সেট কিনলে নিজের দায়িত্বেই কিনে নিতে হবে। কম দামে যারা দামি ব্র্যান্ডের সখ মেটাতে চান তারাই এখান থেকে সেট কেনেন। অনেকে পুরাতন সেটের উপরে নতুন কেসিং লাগিয়ে অরিজিনাল ব্র্যান্ডের নতুন ফোন বলে বিক্রি করেন। অরিজিনাল ব্র্যান্ডের যত ফোন থাকবে সেগুলো দেখতে যেমনই হোক সেগুলো পুরাতন। অনেক পুরাতন সেটে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। সেগুলো ঠিকঠাক করেও এখানে দোকানিরা বিক্রি করেন। প্রতিদিন অনেক ধরনের মানুষ আসে এখানে পুরাতন মোবাইল বিক্রি করতে। তাদের দেখলেই বোঝা যায়, অনেকেই মাদকাসক্ত। এছাড়া, দোকানিদের সঙ্গে মোবাইল চুরি পার্টির এক ধরনের যোগসাজস রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পুরাতন মোবাইল কিনতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবক বলেন, দামে কম হওয়ায় ঝুঁকি আছে জেনেও চোরাই মোবাইল নিয়েছি। শো-রুমের চেয়ে অনেক কম দামে এখানে মোবাইল পাওয়া যায়। মার্কেটে যে মোবাইল ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সে মোবাইল এখান থেকে অর্ধেক দামে পাওয়া যায়।
চাঁদপুর শহরের মোবাইল ব্যবসায়ীরা বলেন, চোরাই মোবাইলের জন্য আমাদের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলে চোরাই মোবাইল বেচাকেনা। প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এসব চোরাই মোবাইল বেচাকেনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় কিশোর গ্যাং জড়িত। বর্তমানে আইফোনের প্রতি বেশি ঝোঁক ক্রেতারা। চোরাই আইফোনের আইএমই নম্বর ফ্লাশ দিয়ে পরিবর্তন করে বিক্রি করছে দোকানদারের কাছে। এর সাথে সম্পৃক্ত মোবাইল ফোন বিক্রেতা, টেকনিশিয়ান, চোর ও ছিনতাইকারীরা রয়েছেন। প্রশাসন চাইলে আইন প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাত বলেন, সদরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি নজরদারি রয়েছে। যারা চোরাই মোবাইল ফোন বেচাকেনা করে প্রমাণ পেলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোন সহ নতুন যে কোন ডিভাইস যারা কিনবেন অবশ্যই সম্পূর্ণ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ক্রয় করবেন। এতে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না।
চোরাই মোবাইল ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের প্রতি আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান চাঁদপুরের সচেতন মহল।