‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’ নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য নাম নিয়ে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করলো প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। শনিবার সকালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন নামকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময় সমসাময়িক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৩০টিরও বেশি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি সংঘঠিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর যূথবদ্ধ এ প্লাটফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু। সংবাদ সম্মেলনে জানানো করা হয়, সম্প্রতি সংঘঠিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর যৌথ এ প্ল্যাটফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের ৬ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তা আইন) বাতিলের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ সমাবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’। এতে যুক্ত ছিল ৩১টি সংগঠন। এরপর অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের নিন্দা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধ দেয়ার প্রতিবাদ, লোককবি রাধাপদ রায়ের উপর হামলার নিন্দা, শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি, একতরফা নির্বাচন বাতিল দাবি, মহান মে দিবস উদযাপন, হরিজনদের উচ্ছেদের প্রতিবাদ, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র হত্যার নিন্দা এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে নানা কর্মসূচি পালন করেছে প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে দেশের লেখক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মীদের যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের পক্ষ থেকে একটি দাবিনামা তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্য ও দাবিগুলো হল—

১. অবিলম্বে সাইবার নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে এবং এই আইনে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। সকল গণমাধ্যমকে সরকারি প্রভাবমুক্ত করতে হবে।

২. সাংস্কৃতিক চর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রা, পালাগান, কবিগান, বাউলগান, গম্ভীরাসহ আবহমান বাংলার গ্রামীণ ও লোকসংস্কৃতি চর্চাকে উৎসাহিত, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত ও পর্যাপ্ত আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে এবং জনকল্যাণ ও সৃজনশীল মানস গঠনে সহায়ক সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৩. দেশ ও জনগণের প্রগতিশীলতা, মননশীলতা পরিপন্থী এবং সুস্থ-সংস্কৃতির স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষুন্নকারী পশ্চিমা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল, ভোগবাদী, যৌন-সুড়সুড়ি মার্কা সংস্কৃতির প্রচার বন্ধ করে জনকল্যাণ ও সৃজনশীল মানস গঠনে সহায়ক, সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৪. ক) সংস্কৃতি ক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রকৃত শিল্পী, সংগঠক ও সংগঠনকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে। খ) শিক্ষা কারিকুলামে সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিষয়সমূহ (পারফর্মিং আর্ট) অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং জনবল কাঠামোতে পর্যাপ্ত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। দেশের প্রখ্যাত ও প্রকৃত গুণি শিল্পী-সাহিত্যিকদের জীবনী, পরিচিতি, কর্মকাণ্ড, অবদান পাঠ্যপুস্তকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। গ) শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত উন্মুক্ত মাঠ এর ব্যবস্থা করতে হবে। ঘ) এলাকাভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। ঙ) দেশের সকল শিল্পকলা একাডেমিকে জনবান্ধব ও কার্যকর করে তুলতে হবে এবং সারাদেশের সরকারি মিলনায়তনগুলো স্বল্প ভাড়ায় ও সহজ শর্তে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে বরাদ্দ দিতে হবে।

৫. মাতৃভাষায় শিক্ষাসহ সর্বজনীন, একমুখি, বিজ্ঞানভিত্তিক, শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গণ ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পায়তারা বন্ধসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। শিক্ষার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।

৬. সকল জাতিসত্ত্বার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি, সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়ী জাতিসত্ত্বার উপর অব্যাহত নির্যাতন বন্ধ এবং পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

৭. ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট উচ্ছেদ করে জনবান্ধব সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষিপণ্য বিপণন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে।

৮. অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিলের নামে শ্রমিক ধর্মঘটের অধিকার হরণের পাঁয়তারাসহ জনস্বার্থবিরোধী যে কোন আইন প্রণয়নের তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। কল কারখানায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৯. নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে।

১০. নির্বাচনী বিধিমালার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুসহ সাধারণ জনগণের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপী, কালোটাকার মালিক, সন্ত্রাসীদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

১১. যোগ্যতা অনুযায়ী সকল কর্মক্ষম মানুষের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংস্কৃতি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে এ প্লাটফর্ম। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এ প্লাটফর্ম রূপান্তরিত হলো ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’-এ।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, উদীচীর সহ-সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রগতি লেখক সংঘের দীনবন্ধু দাস, সমাজ চিন্তা ফোরামের কামাল হোসেন বাদল, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের রঘু অভিজিৎ রায়, বিবর্তনের আমিরুন নুজহাত মনীষা ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সুষ্মিতা রায় সুপ্তি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের ডা. হারুন উর রশীদ, গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি জাকির হোসেন, সংহতি সংস্কৃতি কেন্দ্রের ইফতেখার আহমেদ বাবু, বাংলাদেশ থিয়েটারের খন্দকার শাহ আলম, তীরন্দাজ নাট্যদলের দীপক সুমন, ঢাকা ড্রামার আবু হারুণ টিটো, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের বিমল কান্তি দাস, স্বদেশচিন্তা সংঘের কবি হাসান ফকরি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কবি কামরুজ্জামান ভুঁইয়া, সমাজচিন্তা ফোরামের রঞ্জন দাস শিবু প্রমুখ।

রোববার, ১৮ আগস্ট ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায়

Loading

শেয়ার করুন