সোরিয়াসিস কত প্রকার ও কি কি? সোরিয়াসিস থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় কি?

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী, অ-সংক্রামক, প্রদাহজনিত চর্মরোগ যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে ঘটে। এতে ত্বকের কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জমা হয়ে যায়, ফলে ত্বকে লালচে, উঁচু, খসখসে ও আঁশযুক্ত প্যাচ তৈরি হয়। এটি শুধু ত্বকে নয়, নখ, মাথার ত্বক এবং জয়েন্টেও প্রভাব ফেলতে পারে।

এই রোগের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, প্রতিটি ধরন আলাদা উপসর্গ, অবস্থান এবং চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত। নিচে সোরিয়াসিসের প্রকারভেদ, লক্ষণ, কারণ, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
সোরিয়াসিসের প্রকারভেদ
সোরিয়াসিসকে সাধারণত ছয়টি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
১. প্লাক সোরিয়াসিস (Plaque Psoriasis)
– এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন, প্রায় ৮০–৯০% রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
– ত্বকে লালচে, উঁচু প্যাচ তৈরি হয় যার উপর রূপালী বা সাদা আঁশ থাকে।
– সাধারণত কনুই, হাঁটু, পিঠ এবং মাথার ত্বকে হয়।
– চুলকানি, ব্যথা এবং ত্বকের ফাটল দেখা যায়।
২. গুটেট সোরিয়াসিস (Guttate Psoriasis)
– ছোট ছোট ফোঁটা বা গুটির মতো লাল দাগ দেখা যায়।
– সাধারণত শিশু ও তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
– গলা বা টনসিলের সংক্রমণের পর এটি শুরু হতে পারে।
– পিঠ, বুক, বাহু ও পায়ে বেশি দেখা যায়।
৩. পুসচুলার সোরিয়াসিস (Pustular Psoriasis)
– ত্বকে সাদা ফোঁটা বা পুঁজযুক্ত দাগ দেখা যায়, যার চারপাশে লালচে প্রদাহ থাকে।
– সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।
– হাত ও পায়ের তালুতে বেশি হয় (Palmoplantar pustulosis)।
– জ্বর, দুর্বলতা, এবং ত্বকের ব্যথা হতে পারে।
৪. ইনভার্স সোরিয়াসিস (Inverse Psoriasis)
– শরীরের ভাঁজযুক্ত অংশে হয়, যেমন—বগল, কুঁচকি, স্তনের নিচে।
– ত্বকে মসৃণ, উজ্জ্বল লাল দাগ দেখা যায়, কিন্তু আঁশ থাকে না।
– ঘাম ও ঘর্ষণের কারণে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
৫. এরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস (Erythrodermic Psoriasis)
– এটি সবচেয়ে বিরল ও গুরুতর ধরন।
– পুরো শরীরজুড়ে লাল, ফোলা, খোসা ছড়ানো ত্বক দেখা যায়।
– তীব্র চুলকানি, ব্যথা, এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়।
– এটি জীবনহানিকর হতে পারে, জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
৬. নখের সোরিয়াসিস (Nail Psoriasis)
– নখে গর্ত, রঙ পরিবর্তন, ভঙ্গুরতা এবং নখের নিচে জমা দেখা যায়।
– নখ আলগা হয়ে যেতে পারে।
– এটি psoriatic arthritis-এর পূর্বাভাস হতে পারে।
সোরিয়াসিসের কারণ
সোরিয়াসিসের মূল কারণ হলো শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সুস্থ ত্বকের কোষকে আক্রমণ করে।
সম্ভাব্য কারণসমূহ:
– জেনেটিক (বংশগত): পরিবারে কারও থাকলে ঝুঁকি বেশি।
– ইমিউন সিস্টেমের ত্রুটি: T-cells ত্বকের কোষকে আক্রমণ করে।
– পরিবেশগত ট্রিগার: সংক্রমণ, আঘাত, মানসিক চাপ, ধূমপান, অ্যালকোহল।
– ওষুধ: বিটা-ব্লকার, লিথিয়াম, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ।
লক্ষণ ও উপসর্গ
সোরিয়াসিসের লক্ষণ রোগের ধরন ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
– লালচে, উঁচু, আঁশযুক্ত প্যাচ
– চুলকানি ও ব্যথা
– ত্বকের ফাটল ও রক্তপাত
– নখে গর্ত বা রঙ পরিবর্তন
– জয়েন্টে ব্যথা (Psoriatic Arthritis)
রোগ নির্ণয়
সোরিয়াসিস নির্ণয়ের জন্য সাধারণত নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়:
– চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শারীরিক পরীক্ষা
– ত্বকের বায়োপসি: কোষের বৃদ্ধি ও প্রদাহ পরীক্ষা
– রক্ত পরীক্ষা: অন্যান্য রোগ排除 করার জন্য
– নখ ও জয়েন্টের পরীক্ষা: psoriatic arthritis নির্ণয়ের জন্য
চিকিৎসা পদ্ধতি
সোরিয়াসিসের চিকিৎসা রোগের ধরন, তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহ কমানো এবং রোগের পুনরাবৃত্তি রোধ করা।
১. স্থানীয় চিকিৎসা (Topical Therapy)
– কোর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম: প্রদাহ কমায়
– ক্যালসিপোট্রিয়েন: ভিটামিন D এর সংশ্লেষণ
– টার প্রোডাক্টস: কোষের বৃদ্ধি কমায়
– সালিসাইলিক অ্যাসিড: আঁশ দূর করে
২. আলো চিকিৎসা (Phototherapy)
– UVB Therapy: ত্বকে UVB রশ্মি প্রয়োগ
– PUVA Therapy: Psoralen ও UVA রশ্মির সংমিশ্রণ
– Excimer Laser: নির্দিষ্ট স্থানে আলো প্রয়োগ
৩. সিস্টেমিক চিকিৎসা (Systemic Therapy)
– মেথোট্রেক্সেট: কোষ বিভাজন কমায়
– সাইক্লোসপোরিন: ইমিউন সিস্টেম দমন করে
– রেটিনয়েডস: ভিটামিন A এর সংশ্লেষণ
৪. বায়োলজিক থেরাপি (Biologic Therapy)
– TNF-alpha inhibitors: যেমন—Etanercept, Infliximab
– IL-17, IL-23 inhibitors: যেমন—Secukinumab, Ustekinumab
– এগুলো শরীরের নির্দিষ্ট ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে লক্ষ্য করে কাজ করে
জীবনযাত্রা ও যত্ন
সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
করণীয়:
– ত্বক আর্দ্র রাখা: নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
– স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম
– সঠিক খাদ্যাভ্যাস: অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার
– ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
– নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ
মানসিক প্রভাব
সোরিয়াসিস শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলে। আত্মবিশ্বাসের অভাব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, এবং হতাশা দেখা দিতে পারে। তাই মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিং গুরুত্বপূর্ণ।
সোরিয়াসিস একটি জটিল, দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা, যত্ন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসা গ্রহণ, নিয়মিত ত্বকের যত্ন, এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা—এই তিনটি স্তম্ভই সোরিয়াসিস ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি।
যোগাযোগ
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

