পেরেগ ঠুকে সাঁটানো হচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন : আইনের প্রয়োগ না থাকায় গাছের সাথে নিষ্ঠুরতা

সফিকুল ইসলাম রানা।

গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ও আর্থিকভাবে উপকার করে। কিন্তু সেই গাছের সঙ্গেই করা হচ্ছে নিষ্ঠুর আচরণ। জীবন্ত গাছে পেরেহ মেরে সাটানো হচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন।

এরকমই প্রতিযোগিতা দৃশ্যায়িত হচ্ছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপযেলার সর্বত্র। হাট-বাজার, রাস্তা মোরসহ সর্বত্র একই অবস্থা।ছেংগারচর পৌরসভার নির্বাচন উপলক্ষে পৌর এলায় এ দৃশ্য বেশি। সম্প্রতি মোহনপুর ও ইসলামাবাদ ইউপির উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষেও ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে এ এলাকা। উপ-নির্বচন নির্বাচন শেষ হলেও এগুলো নামানো হচ্ছে না।

উপজেলার সবকয়টি সড়কে পাশের গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার ও ফেস্টুন। এগুলে ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। একেকটি গাছ যেন একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড। এভাবে গাছে পেরেক ঠোকা হচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই। এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে কোনটা কোন গাছ, তা চেনার উপায় থাকে না।

পরিবেশবিদদের মতে, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে গাছ মারাও যেতে পারে। তাই গাছে পেরেক ঠোকা গাছের জন্য চরম ক্ষতি।

যেখানে বেশি করে গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে আমরাই উল্টো গাছের ক্ষতি করে চলেছি। এভাবে গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। এই আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। না হলে গাছের গায়ে পেরেক ঠোকা কখনোই বন্ধ হবে না।

গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেয়ায় গাছের ওপর মানুষের অত্যাচার থামছে না দাবি নাগরিক সমাজের। তাই জনসচেতনতা তৈরি পাশাপাশি গাছ রক্ষার প্রয়োজনে এই আইনটি দ্রুত কার্যকর করার দাবি তাদের।

কালীপুর বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রচারণাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। কোনোভাবেই পেরেক ঠোকা চলবে না।

একই কথা বলেছেন মতলব উত্তর প্রেসক্লাবেরর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব আলম লাভলু । তিনি বলেন, গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।

পরিবেশ বান্দব শামসুজ্জামান ডলার বলেন, গাছে পেরেক মেরে বিজ্ঞাপন টাঙানো বন্ধ করতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, এসব বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন।

Loading

শেয়ার করুন