ফরিদগঞ্জ মডেল মসজিদে রমজানে মুসল্লীদের ঢল

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয় গত (১৬ মার্চ) বৃহস্পতিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধাপে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। গত (১৭ মার্চ) শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় ফরিদগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির।

জানা গেছে, মসজিদ চালুর দিন প্রথম জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য অনেকে সকাল থেকেই উপস্থিত হন। জুম্মার নামাজের সময় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সহস্রাধিক মুসল্লীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণ। নামাজ শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা মাকসুদুল আমিন। এভাবে প্রতি জুম্মার নামাজে নামাজিদের অধিক উপস্থিতির কারন হিসেবে মসজিদটির সৌন্দর্যকেই আলোচনায় রাখছেন এলাকাবাসী।

এছাড়াও পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে মাওলানা মোঃ আরিফ হোসাইন ও মোঃ আব্দুল আজিজ এর খতম তারাবীর ইমামতীতে সুরলিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াতে মুসল্লীদের মাঝে দেখা গিয়েছে আলাদা উন্মাদনা। প্রতিদিন তারাবীর নামাজের জামাতে দেখা যায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধদের উপচে পড়া ভীড়।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) জুম্মার নামাজে সহস্রাধিক পুরুষ ও আলাদা কক্ষে দুই শতাধিক মহিলা মুসল্লীদেরকে পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেখা গিয়েছে মসজিদটিতে। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এই ধরনের আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ পেয়ে মুসল্লীরা বেশ খুশী। নামাজ শেষে দেখা গেছে, সেলফি তুলতে অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকের ফেসবুক ওয়াল ভরে গেছে মসজিদের সামনে, ভেতরে তোলা নানা ছবি ও ভিডিওতে।

মসজিদের পাশের বাসার নিয়মিত নামাজের মুসল্লী সার্ভেয়ার মোঃ মাসুদ আলম (৪০) জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দেশজুড়ে হৃদয় নিংড়ানো মডেল মসজিদ নির্মাণ করার জন্য এবং সেই তালিকায় ফরিদগঞ্জকে অগ্রাধিকার দিয়ে তৃতীয় ধাপে উদ্বোধন সম্পন্ন করে পবিত্র মাহে রমজানে নামাজের সুযোগ করে দেওয়া জন্য। প্রধানমন্ত্রী ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে বিশ্বব্যাপী অনন্য নজির স্থাপন করেছেন, যেমনটি নজির স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামী ফাউন্ডেশন নির্মাণ করার মাধ্যমে। তিনি আরও জানান, মসজিদটিতে প্রবেশ করলেই মসজিদের সৌন্দর্যে হৃদয় শীতল হয়ে যায় তার। পবিত্র হজ্ব পালন করতে গিয়ে তিনি মক্কাতুল মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার মসজিদের যে অবয়ব প্রত্যক্ষ করেছিলেন ঠিক সেরকম দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে সাজানো হয়েছে মসজিদটিকে বলে দাবি করেন তিনি।

মসজিদের নিয়মিত মহিলা নামাজি আমেনা বেগম (৪৫) জানান, মসজিদ উদ্বোধনের পর থেকেই নিয়মিত জুম্মার নামাজ এবং রমজান মাসে তারাবীর নামাজ আদায় করে আসছেন তিনি। ইতিপূর্বে দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছে তার। বাংলাদেশে এতো সুন্দর মসজিদ হতে পারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদটি প্রত্যক্ষ না করলে কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারতেন না তিনি।তিনি আরও বলেন, মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পেরে তিনি বিমোহিত বিমুগ্ধ। তাই ভরা মজমায় হাত তুলে দোয়া করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন তিনি।

চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের সহায়তায় ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের আওতায় এ কাজটি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজিজ এন্ড ব্রাদার্স কাজ শুরু করেন। প্রায় ৪৩ শতাংশের জায়গার উপর ১২ হাজার ৫শ ৪৭ স্কয়ার বর্গফুটের জায়গার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে এই ভবন। যার নির্মিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭২ লক্ষ ২৫ হাজার ১শ ৩৪ টাকা। ভবনটির নিচতলায় আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিং, প্রতিবন্ধীদের জন্য সেন্টার ও নামাজের সুব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র,ইসলামিক বুক স্টোর কার্যালয়,মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা। দ্বিতীয় তলায় থাকছে প্রধান নামাজ ঘর। এছাড়া সম্মেলন কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষ এবং উন্মুক্ত জায়গা যেখানে ঈদের নামাজ পড়া হবে।

তৃতীয় তলায় থাকছে পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধার কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেন্টার, ইসলামিক লাইব্রেরি, খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার পৃথক ব্যবস্থা, হিফজ ও মক্তবখানা। থাকবে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা অজু খানার ব্যবস্থা এবং পৃথক নামাজের কক্ষ। এছাড়াও অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সিঁড়ি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষাসুবিধা থাকছে এবং ওই মডেল মসজিদে প্রায় ৯৫ ফুট আকারের একটি উঁচু মিনার রয়েছে।


প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, তার তত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। মসজিদের কাজ শেষ, এবার উপরের কর্মকর্তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে হস্তান্তরের অপেক্ষায় তিনি। হস্তান্তর করেই তিনি প্রান খুলে এক পলক নজর বুলিয়ে দেখবেন মসজিদটিকে।
কন্ট্রাক্টর মোঃ আব্দুল আজীজ জানান, মেসার্স আজীজ ব্রাদার্স তার মালিকানা লাইসেন্সে মসজিদটির কাজ করিয়েছেন তিনি। আগামী এক সাপ্তাহের মধ্যেই হস্তান্তর করবেন বলে প্রস্তুতি ছিলো তার।

Loading

শেয়ার করুন