ফরিদগঞ্জে পিতার তিন বিয়ে, সম্পত্তি নিয়ে ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব

নিউজ ডেস্ক :

পিতা বিয়ে করেছেন তিনটি। তিন ঘরে রয়েছে ৮ পুত্র ও ৫ মেয়ে। কিন্তু পিতার মৃত্যুর বছর পেরুতেই ভাইদের মধ্যে সম্পত্তি সংক্রান্ত ঝামেলা শুরু হয়েছে। ভাই-বোনদের একটি অংশ পিতা কর্তৃক মৌখিকভাবে দানকৃত সম্পত্তি হিসেবে নিজেদের ভোগদখলে রাখার চেষ্টা করলেও অপরপক্ষ ওয়ারিশ হিসেবে ওই সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ বিক্রি করার চেষ্টা করছে। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হওয়ার পর একপক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত ওই সম্পত্তির উপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা বাজারের।

জানা যায়, রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রূপসা বাজারের রূপসা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিপরীত পাশে^ অবস্থিত জয় ফ্যাশন ক্লথ স্টোর ও সাদিবা ক্লথ স্টোরের মালিক প্রয়াত ওহিদ উল্যা কাজী। তিনি জীবিত থাকাকালে তিনটি বিয়ে করেন। তিন ঘরে ৮ পুত্র ও ৫ মেয়ে রয়েছে। প্রায় দুই বছর পূর্বে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কয়েকমাস পর তার একমাত্র স্ত্রী নুরজাহানা বেগমও মত্যুবরণ করেন। তাদের মৃত্যুর পর ওই দুটি দোকানের মালিকানা নিয়ে তিনটি ঘরের ভাই-বোনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

ওহিদ উল্যা কাজীর তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান কাতার প্রবাসী স্বপন কাজী মুঠোফোনে জানান, তার পিতা জীবিত থাকাকালে তাদের ৪ ভাই ২ বোনকে দুটি দোকানের মালিকানা মৌখিকভাবে দান করেন। পিতা ও মাতা জীবিত থাকাকালে তারা দৈনন্দিন ব্যয়ের জন্য ওই দোকানের ভাড়ার টাকা গ্রহণ করতেন। কিন্তু প্রায় দুই বছর পূর্বে প্রথমে তার পিতা ও এর কয়েকমাস পর তার মা নুরজাহান বেগম মারা যান। এর কিছুদিন পর থেকেই তার অন্য দুই মায়ের ঘরের সৎ ভাই ও বোনেরা ওই সম্পত্তি নিজেদের বলে দাবি করে। সর্বশেষ তারা ওই সম্পত্তির একটি অংশ বিক্রির জন্য পাঁয়তারা শুরু করে। ফলে বাধ্য হয়ে তার বোন ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে চাঁদপুর আদালতে মামলা দায়ের করলে (নং-৭৬০/২০২৩, তাং-১৯/৬/২০২৩) আদালত ১৪৫ ধারা জারি করে। পরে আদালতের নির্দেশমতো ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই হাসানুজ্জামান ওই দোকানগুলোর উপর ১৪৫ধারা জারি করে আসেন।

স্বপন কাজী আরো অভিযোগ করেন, আদালতের নির্দেশনার পরও তার সৎভাই সেলিম কাজী ও হারুণ কাজী প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এতে তারা ও তাদের ভাড়াটিয়ারাও আতংকিত।

দোকানের ভাড়াটিয়া কার্তিক সাহা ও সায়েদ হোসেন জানান, ওহিদ উল্যা কাজী জীবিত অবস্থায় তারা ৪ বছরের জন্য চুক্তিতে দোকান ভাড়া নেন। প্রতিমাসে তারা বাড়িতে গিয়ে ভাড়া দিয়ে আসতেন। পরে ওহিদ উল্যা কাজী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার নিদের্শমতো তার জীবিত স্ত্রী নুরজাহান বেগমের হাতে ভাড়ার টাকা প্রদান করতেন। কিন্তু ওহিদ উল্যা কাজীর মৃত্যুর কয়েক মাস পর তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমও মারা যান। তারা পূর্ব নিয়েমে নুরজাহান বেগমের ওয়ারিশদের কাছে ভাড়া প্রদান করে আসলেও তাদের মৃত্যুর কয়েক মাস পর হতে দোকানের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। স্বপন কাজী ও মনির কাজীদের কাছে তারা ভাড়া প্রদান করলেও তাদের অন্য সৎভাই সেলিম কাজী, হারুন কাজীও ভাড়া দাবি করে। সম্প্রতি তারা দুটি দোকান ঘরের একটি অংশ ওয়ারিশ হিসেবে নিজেদের দাবি করে বিক্রির জন্য বায়না চুক্তি করে বলে শুনেছি।

এ ব্যাপারে হারুণ কাজী মুঠোফোনে জানান, তারা ওয়ারিশ অনুযায়ী তাদের হিস্যা দাবি করেছেন। দোকানগুলোর অবস্থান অনুযায়ী অনেক মূল্যবান হওয়ায় তারা স্বপন কাজীগংকে কিনে নেয়ার জন্যে বললেও তারা রাজি নন। ফলে তিনি ও তার অপর ভাইয়েরা সম্পত্তি বিক্রির জন্য চেষ্টা করছেন। তবে থানা পুলিশ এসে আদালতের নির্দেশনা জারি করেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ আদালত ১৪৫ ধারা অনুযায়ী স্থিতাবস্থা জারির কথা নিশ্চিত করেছে।

Loading

শেয়ার করুন