চায়না দুয়ারীতে ধ্বংস মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর মৎস্যভান্ডার
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/02/2.gif)
সফিকুল ইসলাম রানা :
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/01/diabeties.jpg)
মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর আশপাশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহার। যার ফলে ধ্বংস মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর মৎস্যভান্ডার।
স্থানীয় হরে কৃষ্ণ বর্মন জানান, কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে পানি আসত তখন বাঁশ-বেতের ফাঁদ তৈরির কাজে দম ফেলার ফুরসত মিলত না। সেগুলো দিয়েই চলত মাছ শিকার। তবে চায়না দুয়ারী জাল বাজারে আসার পর সব শেষ। দুয়ারী ফাঁদ দিয়ে সহজেই বেশি মাছ ধরা যায়। তাই মানুষ এখন বাঁশের ফাঁদ কিনতে চায় না। এই জালে মাছ মারা পড়ে নির্বিচারে। সঙ্গে ধরা পড়ে নানা ধরনের জলজপ্রাণীও।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধে সরকার ও মৎস্য বিভাগ যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই মৎস্য সম্পদকে ধ্বংস করতে মতলব উত্তরের জেলেরা মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে নির্বিচারে অধিক মাছ শিকারে চায়না দুয়ারী নামের নতুন এক বিশেষ ফাঁদ ব্যবহার করছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই জাল ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এই ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগ আইন করে এ বছর থেকে চায়না দুয়ারী জাল নিষিদ্ধ করেছে। তবে জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
উপজেলার মেঘনা নদীর চরকাশিম, বোরোচর, চরওয়েস্টার, চর জহিরাবাদ, আমিরাবাদ, এখলাছপুর, ষাটনল, ও সটাকী এলাকা এবং ধনাগোদা নদীর উৎস মুখে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ছোট ডিঙি নৌকা ও বড় নৌকা নদীর তীরের দিকে থেমে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, কী কারণে নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল, এসব নৌকা মাছের বংশ ধ্বংসকারী চায়না দুয়ারী নামের এক ধরনের ফাঁদ ফেলে বসে আছে।
মেঘনায় থাকা মিঠা পানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ্ম এই ফাঁদে ধরা পড়ছে। দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছও এই ফাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। এতে ক্রমেই মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে পদ্মা ও বড়াল নদীসহ এর সংলগ্ন খাল-বিলগুলো।
জেলেরা জানান, চায়না দুয়ারী সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতার, ৬০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার চারটি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘের দিয়ে তৈরি করা হয় এই ফাঁদ।
ধনাগোদা নদীতে চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা ইমাম আলী নামে এক জেলে জানান, এই ফাঁদে সব ধরনের মাছই আটকা পড়ে। আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করতেন। তবে এখন চায়না দুয়ারীর ব্যবহার বেশি। এই জালে কারেন্ট জালের চেয়ে খরচ কম, আয় বেশি।
কালির বাজার এলাকার ধনাগোদা পাড়ের বাসিন্দা সেলিম হোসেন জানান, বিকেল হলেই ছোট-বড় অসংখ্য নৌকায় এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে জাল তুলে আনলে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়া যাবে না।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, চায়না দুয়ারী এক ধরনের নিষিদ্ধ ফাঁদ। এ মৌসুম থেকে এ জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ জালের বিরুদ্ধে নদীতে আমাদের অভিযান চলমান আছে। তবে জনবল সংকটের কারণে কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, নদীতে পানি আসতে শুরু করায় অবৈধ চায়না জালগুলোর ব্যবহার বাড়ছে। অবৈধ চায়না জাল বন্ধে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে যাতে নদীতে অবৈধ চায়না জাল ব্যবহার না করা হয়।
তিনি আরও বলেন, চায়না জাল একটা ফিক্সড ইঞ্জিন বলা হয়। এই জালে ছোট-বড় সব মাছই ধরা পড়ে। বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো বেশি আটকে জালে। এটি জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। চায়না জাল খাল ও বিলে বেশি ব্যবহার করা হয়। নদীর কিনার বা চর এলাকায় এই জালটি ব্যবহার হয়।
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/01/hakim-mizanur-rahman.jpg)
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/02/3.gif)