চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও দালালের দৌরাত্ম্যে রোগীদের ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ) দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। অভিযোগ রয়েছে, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা কোনো নিয়ম না মেনেই যখন-তখন ঢুকে পড়ছেন চিকিৎসকের কক্ষে। এরা আগে থেকেই চিকিৎসকদের সঙ্গে চুক্তি করে নেন। কখনো আবার রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে শুরু করেন টানাহেঁচড়া। তাদের সঙ্গে থাকে মোবাইল ফোনে মুহূর্তে ছবি উঠিয়ে whatsapp গ্রুপে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী কিংবা রোগীর সঙ্গের লোকেরা খুবই বিরক্ত এতে। তাদের এই হেনস্তার শেষ কোথায়?
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সদর হাসপাতালে এমন চিত্রও দেখা যায়।
এদিকে, রিপ্রেজেন্টেটিভদের ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়ম বেঁধে দিলেও তারা তা মানছেন না।
এ বিষয়ে কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করলে তারা বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
চাঁদপুর জেলার প্রায় ৩০লক্ষ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসারস্থল চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা পেতে গড়ে এক হাজারেরও বেশি রোগী আসেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন দুইশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগী ভর্তি হন। ফলে, রোগীর ভিড় সামলাতেই হিমশিম খান চিকিৎসকেরা। কিন্তু, চিকিৎসা না মিললেও রিপ্রেজেন্টেটিভদের ওষুধ বিক্রির প্রচারণা ঠিকই চলছে। কিন্তু হাসপাতালে সেবা নিতে এসে বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারনে।
কবির নামের এক ব্যক্তি জানান, গত সপ্তাহে তিনি তার মাকে নিয়ে এসেছিলেন আজ এসেছেন তার ভাগ্নীকে ডাক্তার দেখাতে। হাসপাতালে ঢোকার আগেই ক্লিনিকের দালালরা তাকে ঘিরে ধরে খুব কম মূল্যে তাদের ক্লিনিকে অপারেশনসহ সব কিছু করা হয় এমন অফার দিয়ে টেনে ধরে। এরকম বিড়ম্বনা চলছেই। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এ হাসপাতালে কোন শৃংখলা নেই।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য চরমে বহির্বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে দেখা যায় সেখানে ভিতরে ও বাহিরে কিছু সংখ্যক নারী ও পুরুষ, উল্লেখ্য সংগীতা দালাল থাকে। হাসপাতালে আসা রোগীদের নানান ভয় দেখিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে দালালচক্র।
হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, প্রতিদিন আশপাশের অন্তত ১০ টি ডায়াগনস্টিকের ১৫-২০ জন দালালকে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে নারী দালালের সংখ্যাই বেশি। এই নারীরা রোগী সেজে বহির্বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকে পড়েন। এরপর চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লেখা শেষ করলেই রোগীর হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নেন তাঁরা। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের সেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করা হয়। দালালদের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
হাসপাতালের চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হচ্ছেন আব্দুস ছাত্তার নামের একজন ৫০বছর বয়সী রোগী। বের হওয়া মাত্রই হাসপাতালের টিকিটি কাউন্টারের সামনে ৫/৬ জন ঔষধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ঘিরে ধরলেন। তার পর হাতের চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপত্রটি নিয়ে নিলেন। দেখলেন চিকিৎসক কী কী ওষুধ লিখেছেন। অন্যদিকে একজন মোবাইল ফোনে ব্যাবস্থাপত্রটির ছবি তুলছেন। একজনের ছবি উঠানো শেষ হলে আর একজন নিয়ে ছবি তুলছেন। এভাবে কয়েকজনের হাত ঘুরে ৩/৪মিনিট পর সেই রোগিকে চিকিৎসা ফেরত দেয়া হলো।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, চিকিৎসক রিপ্রেজেন্টেটিভ সম্পর্ক কখনোই রোগী দেখার সময় হতে পারে না।কোনো চিকিৎসক যদি রিপ্রেজেন্টেটিভদের কক্ষে বসিয়ে রেখে তাদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখান তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ থাকা সত্ত্বে ও অন্য কোম্পানির ওষুধ রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে লেখা নিয়ম নেই। একটা নিয়ম করে তাদেরকে সপ্তাহে একদিন ডাক্তারের সাথে ভিজিট করার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার ১টা থেকে তারা ভিজিট করতে পারবে, কিন্তু তারা হাসপাতালে প্রতিদিনই আসে এটা আমরা অবগত। নির্ধারিত দিন ছাড়া যদি কোন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ভিজিট করতে আসে প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দালালের দৌরাত্ম্য বেড়েছে এটা আমিও শুনেছি, দালাল নির্মূল করতে কিছু সময় লাগবে, তবে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দালালদের ঠাঁই হবে না।
উল্লেখ্য, ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও আইনের আওতায় আনতে হবে, যাদের হাতে চিকিৎসকরা জিম্মি হয়ে আছেন। তাদের প্রতি কঠোর আইন প্রয়োগ করা হলেই কেবল এই দুর্দশার মুক্তি মিলবে। দেশের মানুষ সঠিক ও সুন্দরভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে।’