ফরিদগঞ্জের সিকিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস

মো: আনিছুর রহমান সুজন :
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়া হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব, ল্যাব সংকট, সর্বোপরি শিক্ষকদের অনীহার কারণে নামকাওয়াস্তে চলছে এসব ক্লাস। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে কয়েকটি ক্লাস হচ্ছে।

এতে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির নীতিও ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের শেখ রাসেল ডিজিটালল্যাবের মালামাল চুরি যাওয়ার পর আজও উদ্ধার হয়নি। তবে থানায় জিডি হয়েছে বলে জানাগেছে। আবার শিক্ষার্থীরা জানান কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা নিজেদের কাজে এসকল সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন ঘুরে এবং তাদের সাথে বলার পর এই চিত্র উঠে আসে।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ মে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার রিয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালুর জন্য ল্যাপটপ, মডেম, সাউন্ডবক্স, স্পিকারসহ প্রজেক্টর দেওয়া হয়। শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে কম্পিউটার বিষয়ে প্রথমে ৩দিন ও পরে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস গ্রহণে সক্ষমতা অর্জনের জন্য ১২ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকরা ধীরে ধীরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস শুরু করেন। মুখস্থ ও গদবাঁধা নিয়মের বাইরে ছবি দেখে শিক্ষাপাঠের আনন্দ লুফে নেয় শিক্ষার্থীরা। করোনাকালিন সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের পরিবর্তে অনলাইন ক্লাসের দিকে শিক্ষকরা ঝুঁেক পড়ে। বর্তমানে শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান চললেও মিিিল্টমিডিয়া ক্লাসগুলো হচ্ছে না বললেই চলে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এবং প্রতি সপ্তাহে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখন আর সেই বালাই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রথম প্রথম বিষয়টি অনেকের কাছে ভাল লাগলেও বর্তমানে এটাকে বাড়তি ঝামেলা মনে করছেন । তাই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে শিক্ষকদের আগ্রহ কম। এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে আমরা সুবিধা পেলেও কলেজে এসে এর দেখা পাইনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই মাল্টিমিডিয়া বলতে অনলাইন ক্লাসকেই মনে করছে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রজেক্টর এবং ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডেজিটাল ল্যাব থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এর সঠিক ব্যবহার করছে না। কয়েকটি ল্যাবের অবস্থাতো বলার মতো অবস্থায় নেই।

জানতে চাইলে ঐতিহ্যবাহী রূপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরামুল হক জানান, প্রজেক্টর নষ্ট থাকায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু রেখেছেন। তবে ক্লাসের সংখ্যা পুর্বের তুলনায় কমেছে। তিনি স্বীকার করে আরো বলেন প্রথম প্রথম উপজেলা থেকে যে ভাবে তদারকি করা হয়েছে পরে আর করা হযনি। অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সন্তোষ জনক এবং দেখাগেছে শিক্ষার্থীরা অনেক উৎফুল্ল।

ফরিদগঞ্জ এ আর মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া বিষয়টি সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা প্রয়োজন। কোন সরজ্ঞাম নষ্ট হলে বহুবার বলে ও ঠিক করা সম্ভব হয় না। এসকল বিষয়ে আলাদা টেকনিক্যাল টিম থাকলে সরকারের শিক্ষাথীরা নতুন নতুন বিষয় জানার সুযোগ পাবে।

উপজেলার সহকারি পোগ্রামার নাজমুল হোসেন বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভিজিট করি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে মাসিক রিপোর্ট দেয়া, আমি সেভাবেই পাঠাই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে তাতে ভাটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দিচ্ছি নিয়মানুযায়ী ভালভাবে ক্লাস শুরু করার জন্য।

Loading

শেয়ার করুন