চাঁদপুরে মোবাইল দেখে তারাবি নামাজ পড়ানোর ভাইরাল ছবিটি গত রমজানের

নিউজ ডেস্ক :
চাঁদপুর শহরের একটি মসজিদের ইমাম মোবাইলে সুরা দেখে তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন—এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ভাইরাল ছবিটি গত রমজান মাসের। এ বছর এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের মুসআব বিন উমাইর মসজিদে আহলে হাদিসপন্থিদের তারাবির নামাজ পড়ানোর একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। চলতি রমজানে ওই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বিষয়টি দেখে বেশিরভাগ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

ওই মসজিদের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এ বছর অন্যান্য মসজিদের মতোই তারাবির নামাজ পড়ানো হচ্ছে। এবার মোবাইল দেখে তারাবির নামাজ পড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। ভাইরাল হওয়া ছবি গত বছরের। এটি আমাদের এই মসজিদে ঘটেছিল।

এদিকে, গত ২ মার্চ থেকে ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকে নানা মন্তব্য করছেন। তাদের মধ্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ইমাম এবং মুসল্লি উভয়ে মোবাইল দেখে নামাজ পড়ছেন। নামাজ পড়ার এটা কোন নিয়ম? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আসসালাতু মিরাজুল মুমিনিন”, অর্থাৎ নামাজ হচ্ছে মুমিনদের জন্য মেরাজ। আর সালাত তথা নামাজ তো হলো মাওলার সঙ্গে কথোপকথন। এখন নামাজে দাঁড়িয়ে যদি অন্য কাজ করা হয়, তখন সে নামাজ কি আর মেরাজ থাকে? তারা ওয়াক্তের নামাজের ক্ষেত্রেও অন্যান্য মসজিদ থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা আগে আজান দিয়ে নামাজ পড়েন।’

মোবাইলে সুরা দেখে নামাজ পড়ানোর বিষয়ে মুসআব বিন উমাইর মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের মুয়াজ্জিন মো. কাজল বলেন, ‘তারাবির নামাজ পড়ার ওই ছবিটি এক বছর আগের। সেটি ভাইরাল হয়েছে এ বছর। যিনি নামাজ পড়িয়েছেন ওই ইমাম এখন এই মসজিদে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোরআন এবং সহিহ হাদিস অনুসরণ করি। কোনও মাজহাব অনুসরণ করি না। এভাবে নফল নামাজ পড়া জায়েজ। বিশ্বের অনেক স্থানে এভাবে নামাজ পড়ানো হয়।’

এ বিষয়ে ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, ‘যে ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি গত বছরের। আমাদের এখানে গত বছর রমজানে মোবাইল দেখে তারাবির নামাজ পড়িয়েছেন এক হাফেজ। এ বছর আমরা অন্যদের মতোই মুখস্থ তারাবির নামাজ পড়ছি।’

নামাজে দেখে দেখে সুরা পড়া জায়েজ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিজ্ঞজনরা মতামত দিয়েছেন। সম্প্রতি এক প্রশ্নোত্তরে ড. জাকির নায়েক বলেছেন, “এভাবে নামাজ পড়া যাবে।” ইংলিশ বক্তা শায়খ আসিম আল হাকিমও এভাবে নামাজ পড়া জায়েজ বলেছেন। মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত ফতোয়া আছে। তাদের ফতোয়া অনুযায়ী, দেখে তারাবির নামাজ তথা নফল নামাজ পড়া যাবে। এ ছাড়াও আমি দলিল চাইলে তা দিতে পারবো।’

এবার কেন এই নিয়মে নামাজ পড়ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে হানাফি মাজহাবের মানুষ বেশি। এই মসজিদেও অনেক মানুষ নামাজ পড়েন। তাই সবার কথা বিবেচনা করে আমরা এবার মুখস্থ সুরায় নামাজ আদায় করছি।’ বিতর্ক ও বিভ্রান্তি এড়াতে এই পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুফতি এইচ এম আনোয়ার মোল্লা বলেন, ‘আমরা যে মত বা তরিকা অনুসরণ করি, সেটি হচ্ছে হানাফি মাজহাব। বিশ্বব্যাপী হানাফি মাজহাব অনুযায়ী নামাজে পবিত্র আল কোরআন দেখে পড়া জায়েজ নেই। বর্তমানে সালাফি এবং লা মাজহাবি অনুসারীরা দেখে দেখে পড়েন। এটির কোনও প্রমাণ আমার জানা নেই। বরং সারাবিশ্বে যত ইমাম আছেন, সবাই মুখস্ত পড়েন। এ জন্যই তারাবির জন্য হাফেজদের বাছাই করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নফল নামাজ এভাবে দেখে পড়ার কোনও বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই।’

এ ব্যাপারে চাঁদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।

Loading

শেয়ার করুন
Verified by MonsterInsights