পত্রিকা বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিনের কষ্টের জীবন
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/02/2.gif)
মতলব উত্তর প্রতিনিধি
মতলব উত্তরের ছেংগারচর পৌর এলাকাসহ আশপাশের এলকারর একমাত্র পত্রিকা বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিনের দুর্দিন চলছে। সামাজিক যোগাযোগের কারণে এখন পত্রিকার কদর অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে পত্রিকা বিক্রি করে তাঁর সংসার চলছে না। এরপরও তিনি হাল ধরে রেখেছেন। গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে একা এ পেশায় রয়েছেন। বাকি হকাররা অন্য পেশায় চলে গেছেন। ৩ এপ্রিল সোমবার সরজমিনে দেখা যায়, প্রচন্ড কাঠফাটা রোদ ও গরম উপেক্ষা করে পত্রিকা মাথায় দিয়ে মানুষের ঘরেঘরে গিয়ে পত্রিকা পৌছে দিচ্ছে গিয়াস উদ্দিন। এ রকম প্রতিদিন তিনি পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করলেও সংসার চালানোর মতো টাকা তাঁর রোজগার হয় না।
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/01/diabeties.jpg)
৪৫ বছরেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি পত্রিকা বিক্রেতা গিয়াসউদ্দিনের। ৪৫ বছর যাবৎ মতলব উত্তরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। হাফ প্যান্ট পরার বয়সে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেছিলেন এই গিয়াসউদ্দিন। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। কষ্ট করে সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখন বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। আধুনিকতার ছোয়ায় কাগজের পত্রিকার পাঠক সংখ্যা দিনদিন করে যাচ্ছে তাই গিয়াস উদ্দিনের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বিত্তবানবানদের সহায়তা চেয়েছেন।
১৯৭৮ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের উন্নুক্ত এজেন্সি পত্রিকার দোকান থেকে সর্বপ্রথম মাত্র ৫ কপি দৈনিক ইত্তেফাক এনে মতলব উত্তরে বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে পত্রিকা পাঠক তৈরি শুরু করেন। পরবর্তীতে মতলব দক্ষিণ থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে বর্তমানে দাউদকান্দি মোহাম্মদ আলী নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে পত্রিকা এনে বিক্রি করেন তিনি।
এর আগে দুয়েকটি দৈনিক পত্রিকা নারায়ণগঞ্জ থেকে নদীপথে লঞ্চযোগে মতলব উত্তরে আসতো। পাঠক ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। ওই সময় দোকানপাট অফিস, কাচারি ছিল খুবই কম। ৮০’র দশকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংবাদপত্রের কদর বেড়ে যায় মতলব উত্তরে।
রাস্তায় রাস্তায় অফিস কাচারিতে ঘুরে ঘুরে গিয়াস উদ্দিন ডেকে ডেকে পত্রিকা বিক্রির কাজ শুরু করেন। পত্রিকা বিক্রি করে মোটামুটি দুবেলা আহার জোগাড় করতে সক্ষম হয় এই কিশোর গিয়াসউদ্দিনের।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসার, প্রশাসনের রদবদলে থানা উপজেলায় রূপান্তর হওয়ায় অফিস আদালত বেড়ে যায়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সংবাদপত্রের চাহিদা। তখন সাইকেল কিনে পেছনের ক্যারিয়ারে বক্স তৈরি করে তাতে সংবাদপত্র বহন করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করেন হকার গিয়াসউদ্দিন। শিশু গিয়াস উদ্দিনের সংবাদপত্র হাতে নিয়ে কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে। গিয়াসউদ্দিনের বাড়ি ছেংগারচর পৌরসভার কলাকান্দা গ্রামে।
সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে নিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন। বড় ছেলে মিজানুর রহমান (২৬) এসএসসি পাশ করে বাবার সাথে শুরু করে পত্রিকা বিক্রির কাজ। ছোট ছেলে মিনহাজ (১৭) সবে মাত্র এসএসসি পাশ করেছে, দারিদ্রতার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না। বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার মিতুকে এইচএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দেন। মেঝো মেয়ে শুমাইয়া আক্তার এইচএসসি পাশ করেছে। শত দুঃখ কষ্টের মাঝে স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৪৮) ঘর সংসার সামাল দিয়ে তার পাশে থেকে দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে কিছুটা লেখাপড়া করাতে সক্ষম হয়েছেন।
বদলেছে দিন কিন্তু বদলায়নি গিয়াস উদ্দিনের ভাগ্যের চাকা। নিরক্ষর গিয়াসউদ্দিন যিনি পত্রিকা দেখেই বুঝেন কোনটা কী পত্রিকা।
৪৫ বছরেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি
হকার গিয়াসউদ্দিন জানান, ছোট বেলায় মা’মারা যাওয়ার পরে সংসারের অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারিনি। চলে যাই ঢাকায়, সেখানে কিছুদিন রাস্তায় রাস্তায় চকলেট বিক্রি করতাম, আবার চলে এসেছি মতলবে। বেছে নেই পত্রিকা বিক্রির কাজ। অনেক হকার আসছে গেছে কিন্তু আমি কখনো ছেড়ে যায়নি এই পেশা থেকে। দুই ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী কে নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি বর্তমানে। গত বছর করোনা ও অসুস্থতার কারণে পত্রিকা বিক্রি করতে পাড়ি নি।
তিনি আরো বলেন, ইউএনও শারমিন স্যার থাকাকালীন সময়ে আমাকে সরকারি সহায়তায় ছোট একটি ঘর করে দিয়েছিলেন, সেই ঘরেই আমি এখন দিনাতিপাত করছি।
দীর্ঘ ৪৫ বছর সংবাদপত্র বিক্রির সাথে জড়িত থেকে আজ তিনি বয়সের ভারে ক্লান্ত। পারেনা সাইকেল চালাতেও। এখন পায়ে পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করছেন তিনি। তার ইচ্ছা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংবাদপত্র নিয়ে পাঠকের সেবায় হাজির থাকবেন।
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/01/hakim-mizanur-rahman.jpg)
![](https://chandpurreport.com/wp-content/uploads/2024/02/3.gif)