পলিথিনের ব্যবহার ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে

সম্পাদকীয়

পলিথিন দূষণ নিয়ে সারা বিশ্বে শোরগোল, হৈ হৈ রৈ রৈ কাÐ চলছে। তাহলে আমরা নীরব কেনো থাকবো? আমরা কি এর দূষণ ও এর ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কার মধ্যে নেই? আমরা কি তাহলে ঘুমিয়ে আছি? তাহলে জেগে উঠা উচিত এখনই।

আমরা জানি, পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার নদী দূষণ, বর্জ্র ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতাসহ সামগ্রিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ পলিথিন। পলিথিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সিটি করপোরেশন, জেলা শহর, পৌরসভা ও উপজেলা শহর এলাকায়। ফলে শহর এলাকার নদ-নদীগুলোই পলিথিন দূষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, বংশী, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী নদী যা রাজধানী ঢাকার, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী; চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর পড়েছে বলে আমরা সংবাদ মাধ্যমে জানতে জানতে পেরেছি। পলিথিনের স্তর জমার কারণে নদী দূষণের পাশাপাশি জীববৈচিত্রেরও ধ্বংস হচ্ছে। সেই সাথে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বন্যা, নদীভাঙনের মতো সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। কমে যাচ্ছে মাছের সংখ্যাও। তাছাড়া জলাবদ্ধতাও একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। শহর, গ্রামের পয়নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয় ড্রেন। কিন্তু ইদানিংকালে এই ড্রেন পলিথিনের ময়লায় বদ্ধ হয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দৈনিক ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগসহ প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার ৩০ লাখেরও বেশি যা ক্ষতি করছে পরিবেশের। এসব মাটির উর্বরতা নষ্ট করে ফসলের ক্ষতি করছে পলিথিন। আমরা জানি যে, পলিথিন স্বাস্থ্যের ক্ষতি ধীর গতিতে হয়ে থাকে। যেমন-চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্ট, লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, ক্যান্সার, মাথা ব্যাথা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়। পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে চর্মরোগ তৈরি হয়

সুতরাং আমাদের দ্রæত গতিতে পলিথিন দূষণ রোধে এগিয়ে আসা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সবদিক থেকে। যেভাবে চলছে এমনটা আগামীতেও চললে বিপদ সীমার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না আমাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক অনেক কারণ থাকলেও পলথিন দূষণও এর অন্যতম একটি কারণ।

পলিথিন দূষণ আমাদের নিজেদের রোধ করা উচিত। পলিথিনের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে পারি। পচনশীল ময়লা ফেলার আগে প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিভিন্ন সামগ্রী আলাদা করতে পারি। যত্রতত্র পলিথিন না ফেলে একজায়গায় ফেলতে পারি। বাজার করার ক্ষেত্রে পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ সাথে রাখতে পারি।

আমরা মনে করি, জনগণের পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার কমানোর পদক্ষেপের জন্যে। সরকাারিভাবে যদি পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে প্রণয়নকৃত আইন বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে দ্রæত পলিথিনের ব্যবহার কমে যাবে বলে আমরা মনে করছি।

পলিথিনের দূষণ ও ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হলে ও কার্যক্রম পরিচালনায় করা গেলে ও প্রতিনিয়ত নজরদারি করা গেলে জনগণ সচেতন হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলো জনগণকে পলিথিন দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে পারে। আমরা আরো মনে করি যে, পলিথিনের ক্ষতি সম্পর্কে ও সচেতনতা সম্পর্কে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন প্রতিবেদন করা যেতে পারে।

জনসচেতনতা বাড়াতে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এলাকায় পলিথিনের ক্ষতি সম্পর্কে জনগণকে জানানো যায়। এভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পলিথিন দূষণ রোধ করা সম্ভব।

Loading

শেয়ার করুন