মতলব উত্তরে ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগে অনিয়ম

সফিকুল ইসলাম রানা :

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর ১০ আগষ্ট একটি অভিযোগ দায়ের করেন কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর চাকরি পদে আবেদন প্রার্থী মো. মাসুম মিয়া।

জানা যায়, বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক গত ২৫ জুলাই ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগে ৯ জন আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করেন, তার মধ্যে ৬জন প্রার্থী লিখিত পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন। লিখিত পরিক্ষায় ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মো. আবুল কাশেমের কন্যা কাসপিয়া আক্তার থেকে প্রতিবন্ধী মো. মাসুম মিয়া ১নাম্বার বেশি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষায় মো. মাসুম মিয়াকে পয়েন্ট ৫ কম দেখিয়ে কাশপিয়া আক্তারকে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত কাসফিয়া আক্তার ৬দিন পরই মার্তৃত্বকালিন ছুটিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ সূত্র জানা যায়, মো. মাসুম মিয়া ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে জন্য আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ জুলাই লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফলাফল জানতে চাইলে ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মজিবুর রহমান বলেন আমার পায়ে সমস্যা তাই আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে জানতে পারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি অর্থের বিনিময়ে পূর্বে নিয়োগ ঠিক করে রেখেছিল। উক্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষাটি ছিল লোক দেখানো এবং পূর্বেও এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ গুলোতেও একাধিক ব্যাক্তির সাথে অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারি অভিযোগ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে উক্ত নিয়োগ থেকে বুঝা যায় সরকারী ফরমায়েশ রক্ষা করে তাদের পছন্দ মত অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়। তাই উক্ত নিয়োগের অর্থ লেনদেনে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত পূর্বক সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের কতৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।

কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর চাকরি পদে আবেদন প্রার্থী মো. মাসুম মিয়া জানান, আমি ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আমি লিখিত পরিক্ষায় ১ নাম্বার বেশি পেয়ে উত্তীর্ণ হই, মৌখিক পরীক্ষাও আমার খুব ভালো হয়েছে। পরে জানতে পারি ঐ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের মেয়ে কাশপিয়া আক্তারকে ঐ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি সাথে কথা বলে আমি যানতে পারি আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমাকে চাকুরী দেওয়া হয়নি। আর তারা আগে থেকেই টাকার বিনিময়ে কাসপিয়াকে সিলেক্ট করে রেখেছে।

ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য জানান, নিয়োগ বঞ্চিতরা ও সচেতন এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ, বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মজিবুর রহমান প্রধান ও মতলব উত্তর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক বিদ্যালয়ে এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বৈধভাবে নিয়োগের জন্য দাবী জানান।

ওই বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক সদস্য প্রতিনিধিকে মোবাইল ফোনে বলেন, গত ২৫ জুলাই ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে পরিক্ষা নেয়া হয়েছে তবে সেখানে একটি ছেলেটি ভাল ফল করেছে কিন্তু তারপরও তাকে বাদ দিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের সবসময়ের সমালোচিত একজন শিক্ষকের মেয়েকে পয়েন্ট ৫ নম্বর বেশি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক এবং কাশপিয়া আক্তারের বাবা মো. কাশেম মাষ্টার সাংবাদিকদের জানান, মতলবে আরো স্কুলে তো দুর্নীতি হয়েছে সেখানে তো কেউ খবর নিচ্ছে না তাহলে ইন্দুরিয়ায় কেন এত খবরদারি।

ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. বশির আহাম্মেদ, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগে এখানে ডিজির প্রতিনিধি, শিক্ষা অফিসার নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন আর এখানে অনিয়মের কোন অবকাশ নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা এখানে বৈধ ভাবেই নিয়োগ দিয়েছি। পরিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখতে চাইলে, তিনি বলেন, উত্তরপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে রয়েছে।

ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মজিবুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ৯জন আবেদন করে তার মধ্যে পরিক্ষা দেয় ৬ জন আর লিখিত ও ব্যবহারিকে ছেলেটি ভাল করে তবে মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে মেয়েটি পয়েন্ট ৫ নাম্বার বেশি পায়। এই জন্য মেয়েটিকে নেয়া হয়েছে এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। নিয়োগ সম্পূর্ন স্বচ্ছ হয়েছে।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মজিবুর রহমান বলেন, এলাকার একটা গ্রুপ তার বিরুদ্ধে সব সময় অপপ্রচার করে আসছে এটা তারই অংশ। এগুলো মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।

অর্থের বিনিময়ে মেয়েটিকে পদে নিযোগ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবুর রহমান বলেন, একজন মানুষ লিখিত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় ভাল করলো তবে মৌখিক পরীক্ষা ভাল করলো না করলে তাকে কিভাবে নেয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, তার উপর ছেলেটির (মো. মাসুম মিয়া) দু’টো পায়ে সমস্যা আর আমাদের বিদ্যালয়ে দুটো চার তলা বিল্ডিং এখন সে কি করে প্রতিদিন চার তলায় উঠবে নামবে এসব বিষয়ও চিন্তা করে মেয়েটিকে নেয়া হয়েছে।

তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা এই নিয়োগ সম্পূর্ন স্বচ্ছ হয়েছে আপনারা চাইলে এই বিষয়ে খোজ নিতে পারেন।

নিয়োগ বোর্ডের ডিজি ও ছেংগারচর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. বেনজির আহম্মেদ মুন্সি জানান, ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ছিল এর মধ্যে আমি ডিজি প্রতিনিধি ছিলাম, নিয়োগ কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয়েছে। মো. মাসুম এবং কাসফিয়ার মধ্যে অত্যন্ত কম্পিটিশন ছিল এ জন্য আমরা তিনবার কম্পিউটার ও ভাইবার নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে কাসপিয়া আক্তার পয়েন্ট ৫ বেশি পাওয়ায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদুল্লাহ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা করে প্রথম স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এরপূর্বে যদি কেউ অনিয়ম করে থাকে তার দায়ভার তারাই নিবে।

চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই। জানার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Loading

শেয়ার করুন