হেপাটাইটিস বি : লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

 লাইফস্টাইল ডেস্ক:

হেপাটাইটিস বি হচ্ছে একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত অথবা লিভারকে আক্রমণ করে। হেপাটাইটিস বি (HBV) নামক একটি ভাইরাসের এর আক্রমণে এ রোগ হয়।

শিশুদের অধিক হারে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পৃথিবীতে বছরে ২ থেকে ৫ লাখ শিশু হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে তারা এই রোগের বাহক হয়।

অনেক সময় সংক্রমণের প্রথম দিকে কোন লক্ষনই প্রকাশ পায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, চামড়া হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব হলুদ হওয়া, পেট ব্যাথা ইত্যাদি লক্ষন দেখা দিতে পারে।

সাধারণত এই লক্ষনগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। সংক্রমণের পর রোগের লক্ষন প্রকাশ পেতে দীর্ঘ সময় (৩০ থেকে ১৮০ দিন)লেগে যায়।

 জন্মের সময় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশই ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি’তে আক্রান্ত হন যেখানে ৫ বছরের অধিক বয়সের রোগীর ক্ষেত্রে আক্রান্তের হার মাত্র ১০ শতাংশ।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ সময়েই কোন লক্ষন প্রকাশ পায় না কিন্তু এটি থেকে ধীরে ধীরে সিরোসিস এবং যকৃতের ক্যান্সার হতে পারে।

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক এবং এদের শতকরা ২০ শতাংশ রোগী লিভার ক্যান্সার অথবা সিরোসিসের কারণে মারা যেতে পারেন।

এই ভাইরাসটি সাধারনত রক্ত অথবা দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। যে সব অঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ বেশি থাকে সেখানকার শিশুরা সাধারনত জন্মের সময় অথবা শৈশবেই অন্য কোন আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কিন্তু যে সব অঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ কম সেখানে শিরায় মাদকের ব্যবহার এবং অরক্ষিত যৌনমিলনই এ রোগের প্রধান কারন।

এছাড়াও, রক্ত গ্রহণ, ডায়ালাইসিস, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একসাথে বসবাস, সংক্রমণের হার অধিক এমন স্থানে বার বার ভ্রমণ ইত্যাদি নানা কারনে এ রোগ হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এইডসের চেয়েও ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক এবং প্রতিবছর এইডসের কারণে পৃথিবীতে যত লোকের মৃত্যু হয় তার চেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করে হেপাটাইটিস বি এর কারণে।

১৯৮০ সালে ট্যাটু এবং আকুপাংচারের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এ রোগে সংক্রমিত হয়েছিলেন যদিও বর্তমানে এ ধরনের মাধ্যম অনেকটা নিরাপদ।

হাত ধরা, একই পাত্রে খেলে, কোলাকুলি করা, চুম্বন, হাঁচি, কাশি, অথবা মাতৃদুগ্ধ পানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না। সংক্রমণের ৩০ থেকে ৬০ দিন পর এ রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারনভাবে রক্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

১৯৮২ সালে এ রোগের প্রতিরোধ টীকার মাধ্যমে করা সম্ভব হয়েছে। জন্মের প্রথম দিনেই এ রোগের টীকা নেয়া ভাল। সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য আরও ২ থেকে ৩ টি ডোজ নিতে হবে। ৯৫% ক্ষেত্রে এই টীকা ভাল কাজ করে।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ তাদের জীবদ্দশার কোন না কোন সময় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৪ থেকে ৩৫ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে আক্রান্ত।

এ রোগে প্রতি বছর সাড়ে সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। এদের মধ্যে প্রায় তিন লাখ মারা যায় যকৃতের ক্যান্সারের কারনে।

বর্তমানে এ রোগটি পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় অতিমাত্রায় দেখা যায়। এ সব অঞ্চলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে আক্রান্ত।

হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ:

হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণকে সাধারনভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- অ্যাকিউট বা তীব্র সংক্রমণ, এবং ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ।

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই কোনরকম সমস্যা ছাড়া এটি সেরে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা তাকে পরবর্তী সময়ে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

কিন্তু এ ভাইরাসটি যদি ৬ মাসের অধিক সময় ধরে রক্তে অবস্থান করে তখন তাকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলা হয়। সাধারনভাবে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০% এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৫% থেকে ১০% শিশু ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো:

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন মাস পর এর লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ দেখা দিতে শুরু করে। হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ হাল্কা থেকে মারাত্মক হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অ্যাকিউট সংক্রমণের লক্ষনগুলো নিম্নরুপঃ

* খাদ্যে অরুচি।
* ক্ষুধা মন্দা এবং বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।
* মাংসপেশি এবং হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয়।
* পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে হালকা জ্বর।
* প্রশ্রাবের রং হলুদ হয়। চোখ হলুদ হয়ে যায়, একে জন্ডিস বলে।
* গা চুলকানো।
* গায়ের চামরার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।
* অবসাদ বোধ করা।
* বেশীরভাগ সময়েই মাথা ব্যথা থাকা।
* সাধারণত এক তৃতীয়াংশ লোক লক্ষণ ও উপসর্গসমূহের কিছুই বুঝতে পারেন না, এক তৃতীয়াংশ লোকের মাথাব্যথা, গা শিরশির এবং জ্বর হয় এবং এক তৃতীয়াংশ লোকের, ক্ষুধামন্দা, জন্ডিস, জ্বর, ডায়রিয়া ও বমি দেখা দেয়।

কিভাবে ছড়ায়?

এ রোগ সাধারণত দুই ভাবে ছড়ায়, হস্তান্তর অথবা ভাইরাস সংক্রমন।

হস্তান্তর:
সাধারণত তরল পদার্থ ও চামড়ার সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায় আবার রক্তে হেপাটাইটিস বি আছে এমন কাউকে রক্ত প্রদান করলে এ রোগ হতে পারে, এছাড়াও যেকোন প্রকার যৌন আচরন যেমন- চুম্বন, যৌন মিলন, মুখে যৌন ক্রিয়া, সমকামিতা অথবা ইত্যাদি কারনে এ রোগ ছড়াতে পারে।

আক্রান্ত মা থেকে শিশুর সংক্রমনের ঝুকি সবচেয়ে বেশি অপরদিকে আক্রান্ত সন্তান থেকে মা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এটি পরিবারের এক সদস্য থেকে অন্য সদস্যের শরীরে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি সহজে সনাক্ত করা যায় না এবং এইচ আই ভি এইডস থেকেও এটি ১০০ গুন বেশি সংক্রামক।

হেপাটাইটিস বি’তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি:

* যাদের রক্তক্ষরন অথবা অন্য কোন কারণে সৃষ্ট রক্তশূন্যতায় বার বার ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে হয়।
* অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অধিবাসী যেমন আফ্রিকা ও এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি রোগের প্রকোপ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
* অনিয়ন্ত্রিত যৌন অভ্যাস যেমন- সমকামীতা, একাধিক নারী অথবা পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলন ইত্যাদি।
* ইনজেকশনের মাধ্যমে (বিশেষ করে একই নিডল অথবা সিরিঞ্জের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির মাদক গ্রহণ) মাদক দ্রব্য গ্রহণ।
* ছয় মাসের অধিক সময় ধরে হেপাটাইটিস বি রোগের প্রাদুর্ভাব অধিক এমন এলাকায় অবস্থান করলে।
* রোগীর দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ, স্যালাইন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ, অথবা ল্যাবরেটরিতে রক্ত ও রোগীর দেহ থেকে সংগৃহীত তরল পদার্থ নিয়ে পরীক্ষার সময় অসাবধানতার ফলে হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত রক্ত বা অন্য কোন তরল জাতীয় পদার্থ স্বাস্থ্য কর্মীদের রক্তের সংস্পর্শে এলে।
* হেপাটাইটিস বি’তে আক্রান্ত মায়ের গর্ভজাত সন্তানের আক্রান্ত নয় এমন মায়েদের সন্তানের তুলনায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে    আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অধিক থাকে।

হেপাটাইটিস বি নিরূপণের উপায়:

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখে সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কিনা তা শনাক্ত করতে হবে। সাধারণত রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন, হেপাটাইটিস বি ই এন্টিজেন, হেপাটাইটিস বি আইজিএম কোর অ্যান্টিজেন এবং সেই সঙ্গে লিভার এনজাইমের মাত্রা অধিক হলে তা নিশ্চিতভাবেই হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণের কথা বলে দেয়।

ক্রনিক বা দীর্ঘ মেয়াদি হেপাটাইটিস বি নিশ্চিত হতে রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেনের দীর্ঘ মেয়াদি উপস্থিতি, হেপাটাইটিস বি কোর আইজিজি অ্যান্টিজেন, হেপাটাইটিস ই এন্টিজেন এবং লিভার এনজাইম পরীক্ষা করতে হবে।

হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে করনীয়:

* কতগুলো বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করলে এ রোগ থেকে দুরে থাকা সম্ভব। যেমন-
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
* ইনজেকশন ব্যবহারের সময় অবশ্যই নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।
* দাঁতের চিকিৎসায় যাতে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা।
* হেপাটাইটিস বি’র টিকার ৪টি ডোজ নেওয়া। এর প্রথম তিনটি ১ মাস পর পর এবং চতুর্থ ডোজটি প্রথম ডোজ নেয়ার ১ বছর পর নিতে হবে।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা:

হেপাটাইটিস বি এর শতভাগ সফল কোন চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবিত কোন কোন ঔষধ ভাল ফল দিচ্ছে বলে গবেষকরা দাবি করলেও এখনও কোন বিশ্বস্ত ঔষধ বাজারে আসেনি।

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে অবশ্যই ভাইরাসের DNA পরীক্ষা করতে হয়। DNA পরীক্ষা যদি পজিটিভ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশ্চিত হন আক্রান্ত রোগীর Portal Hypertension বা অন্য কোন জটিল সমস্যা আছে কিনা, তার ফাইব্রোসিস পরিবর্তন অথবা সিরোসিস হয়েছে কিনা এবং এসোফেগাল ভ্যারিক্স এ কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা।

সাধারণত লিভার এর পরিবর্তনের সাথে সাথে এসোফেগাল ভেরিক্স গুলো বদলে যায় এবং রক্তের ক্রমাগত চাপে এই ভ্যারিক্স গুলো ছিঁড়ে গিয়ে রোগীর নাক, মুখ দিয়ে রক্ত এসে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। উন্নত বিশ্বে ভ্যারিক্স চিকিৎসায় এক ধরনের কৃত্রিম রক্ত-নালী তৈরি করে লিভারের অকার্যকর অংশ হতে রক্তনালী সরাসরি ভ্যারিক্স এ প্রবাহিত করা হয়।

কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে এসোফেগাল ভ্যারিক্স লাইগেশন বা EVL পদ্ধতি চালু আছে এবং তুলনামূলক ভাবে এর খরচও অত্যন্ত কম। মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় ৩ থেকে ৪ টি ভ্যারিক্স লাইগেশন করা সম্ভব হয়। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ডায়াবেটিক বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা তা জেনে তারপরে রোগীর জন্য থেরাপি নির্বাচন করবেন।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় এখন খাবার ট্যাবলেট আছে যা খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়। কার্যকর চিকিৎসা হলো ইন্টারফেরন, পেগালিটেড ইন্টারফেরন আলফা ২-বি অথবা পেগাসিস এবং সাথে মুখে খাওয়ার ঔষধ টেলবিভুডিন, ল্যামিভুডিন, এডিফোভির ইত্যাদি।

উন্নত চিকিৎসার জন্য আজকাল অনেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড, ভারত অথবা ব্যাংকক যান। আমাদের দেশে অণুজীব বিজ্ঞান গবেষণা এবং এ ধরনের রোগ নির্ণয়ের জন্য যে সমস্ত ল্যাবরেটরি আছে তা পর্যাপ্ত নয় বিধায় অনেক রোগীকে PCR পরীক্ষার জন্য রক্ত ভারত অথবা সিঙ্গাপুরে প্রেরণ করতে হয়।

যদিও বাংলাদেশে কিছু ল্যাবে এই টেস্টগুলো হচ্ছে কিন্তু তারা মোটেও নির্ভুলভাবে এই পরীক্ষা করতে পারছে না। এত প্রতিবন্ধকতার পরেও বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় ডাক্তারগণ অন্য দেশের তুলনায় ভালো করছেন।

লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই দেরি না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এখনও এর কোন কার্যকরী চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। নিয়মিতভাবে চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ আরোগ্য হয় না ঠিকই কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

হেপাটাইটিস বি এর টিকা:

হেপাটাইটিস বি এর টিকা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রমন প্রতিরোধ করতে পারে অর্থাৎ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে হওয়া লিভার অথবা যকৃতের ক্যান্সার এবং লিভার অথবা যকৃত নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যান্য টিকার সাথে হেপাটাইটিস বি এর টিকা দেয়া যায়। সাধারনত হেপাটাইটিস বি এর টিকা আজীবন সুরক্ষা দেয়।

কারা হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেবেন?

* শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৩ বার (ডোজ) হেপাটাইটিস বি এর টিকা দেয়া হয়। ১ম বার জন্মের পর পর, ২য় বার ১ থেকে ২ মাস বয়সের সময় এবং ৩য় বার ৬ থেকে ১৮ মাস বয়সের সময়। আবার কোন কোন শিশুদের ৪র্থ বারে আরও একটি টিকা দেয়া হয়। অতিরিক্ত টিকাটি কিন্তু শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়।

* ১৮ বছরের অথবা তার বেশী বয়সীদের ক্ষেত্রে আগে টিকা দেয়া না থাকলে হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়া উচিৎ।

* বড়দের ক্ষেত্রে, ৩ ডোজ হেপাটাইটিস বি এর টিকা দেয়া হয়।১ম টিকা নেওয়ার ৪ সপ্তাহ পর ২য় টিকা, এবং ২য় টিকা নেওয়ার ৫ মাস পর ৩য় টিকা নিতে হয়। সকল বয়স্ক ব্যক্তি যাদের টিকা দেয়া নেই এবং যাদের হেপাটাইটিস বি এর সংক্রামন হওয়ার সম্ভবনা আছে তাদের টিকা দেয়া উচিৎ।

* ডাক্তারের পরামর্শমত যে কেউ হেপাটাইটিস বি আক্রমন থেকে সুরক্ষা পেতে এই টিকা নিতে পারেন।
* গর্ভবতী মা’র ক্ষেত্রে, ঝুকি মনে করলে তিনি অবশ্যই টিকা নিবেন। এছাড়াও যে কোন গর্ভবতী মা হেপাটাইটিস বি’র আক্রমন থেকে সুরক্ষা পেতে টিকা নিতে পারেন।

বিজ্ঞাপণ

কাদের হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়া যাবে না?

* কারো যদি ইষ্ট বা টিকার কোন উপাদানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা অর্থাৎ এলার্জি থাকে তার হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়া যাবে না।
* কেউ টিকা নেবার সময়সূচীর সময় শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকলে তবে পুরোপুরি সুস্থ হবার পর হেপাটাইটিস বি এর টিকা নিতে হবে।
* যদি কারো ১ম বার হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়ার পর জীবনের ঝুকিপূর্ন সংবেদনশীলতার (এলার্জি) ঘটনা ঘটে তবে তার হেপাটাইটিস বি’র পরবর্তী টিকা নেয়া যাবে না।

শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ:

হেপাটাইটিস বি’তে নবজাতকরা মায়ের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া শৈশবে ও কৈশোরে খেলাধুলার সময় আঁচড়ের মাধ্যমেও বাহক শিশু থেকে সুস্থ শিশুতে এ রোগ ছড়াতে পারে । একইভাবে সুচের মাধ্যমে নাক কান ফুটো করার মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে । আবার অশোধিত সিরিঞ্জ ও সুচ দ্বারা এবং চুল কাটার সময় সংক্রমন ঘটতে পারে।

হেপাটাইটিস বি কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়:

* সেলুনে চুল অথবা দাড়ি কাটার সময় নতুন ব্লেড ব্যবহার করা।
* নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখা বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে।
* সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।
* শরীরে কোন ছিদ্র অথবা উলকি আঁকার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
* হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রবণ এলাকায় বেড়াতে যাবার আগে অবশ্যই টিকা দেয়া।
* চিকিৎসাকর্মীদের হেপাটাইাটস বি রোগীর চিকিৎসার সময় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস:

২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। লিভারের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন আয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়।

পরিশেষে:
কিছু ব্যপার মনে রাখতে হবে যেমনঃ

*প্রচুর বিশ্রাম নিন।
*যৌন সম্ভোগের সময় কনডম ব্যবহার।
*ধূমপান ও মদ্যপান নিষিদ্ধ।
*কাঁচা সালাদ ও ফল-মূল বেশি খাবেন।
*তেল-চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
*লবণ একেবারেই খাবেন না।
*গরু অথবা খাসির মাংস যেগুলো লাল মাংস হিসেবে পরিচিত সেগুলো খাবেন না।
*ভিটামিন-ই, ভিটামিন বি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যথা বিটা ক্যারোটিন এবংভিটামিন-সি যুক্ত খাবার বেশি খাবেন।
*প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটবেন এবং হাল্কা ব্যায়ামের অভ্যাস করবেন।
*দিনে একবেলার বেশি ভাত খাবেন না এবং দুই বেলা রুটি খাবেন।
*অযথা কোন মাল্টিভিটামিন খাবেন না।
*শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করুন।

আজই নিজের এবং পরিবারের সবার HBSAG পরীক্ষা করে নিন। এখনও সংক্রমিত না হয়ে থাকলে অতি দ্রুত হেপাটাইটিস-বি এর প্রতিষেধক টীকা নিন। হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।

ঔষধ পেতে যোগাযোগ করুন :

হাকীম মিজানুর রহমান (ডিইউএমএস)

হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
একটি বিশ্বস্ত অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।

মুঠোফোন : 01742057854, ইমো/হোয়াটস অ্যাপ : 01762240650

শ্বেতীরোগ, যৌনরোগ, পাইলস (ফিস্টুলা) ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসক।

সারাদেশে কুরিয়ার সার্ভিসে ঔষধ পাঠানো হয়।

Loading

শেয়ার করুন