ধনাগোদা নদী দখলে ভাসমান রেস্টুরেন্ট: অবৈধ দখল, পরিবেশ ধ্বংস ও প্রশাসনের নীরবতা

মতলব উত্তর  প্রতিনিধি : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের চরমাছুয়া এলাকায় ধনাগোদা নদীর বুক চিরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বিশাল ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট ‘ধনাগোদা রিভারভিউ ভাসমান রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি এ অবকাঠামোটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করে গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী সিদ্দিকুর রহমান।

রেস্টুরেন্টটিতে রয়েছে ২১টি পৃথক কক্ষ এবং প্রায় ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা। পুরো স্থাপনাটি কার্যত নদীর একটি বড় অংশকে বেসরকারি মালিকানার আওতায় নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নদীর বুক চিরে গড়ে ওঠা এ স্থাপনা শুধু অবৈধই নয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলেও আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এই রেস্টুরেন্টে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নেই উদ্ধার সামগ্রী, সাঁতারুর ব্যবস্থা বা জরুরি সাহায্য সংযোগ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে।

রেস্টুরেন্টের আশপাশে প্রতিনিয়ত কচুরিপানা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা পানি দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং নদীর স্বাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় নদী হারাচ্ছে তার প্রাণশক্তি ও স্বাভাবিক গঠন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর ভেতরে এভাবে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ স্পষ্টতই নদী সংরক্ষণ আইন ২০১৩ ও পানি আইন ২০১৮-এর লঙ্ঘন। কোনো ব্যক্তির দাবি বা প্রয়োজনে নদীর জায়গা ব্যক্তিমালিকানায় রূপান্তর করা যায় না। এটি আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী।

স্থানীয় কৃষক মো. রফিক মিয়া বলেন, এই রেস্টুরেন্টের কারণে আমরা নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছি না। আগে এখান থেকে মাছ ধরতাম, এখন মাছ তো নেই বললেই চলে। নদী যেন এখন ব্যক্তিমালিকানার সম্পত্তি হয়ে গেছে।

অবৈধ স্থাপনাটির উদ্যোগতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এটা আমার এলাকা, এখানে অনুমোদনের কী আছে? আমি কোনো ক্ষতি করছি না। শুধু পর্যটকদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করেছি মাত্র। আগামী শুক্রবারে পুরোদমে উদ্বোধন করা হবে রেস্টুরেন্টটি।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, আমি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। এখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো লিজ বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব। এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের কাছে কোনো তথ্য বা চিঠি পাঠায়নি। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি।

এদিকে মেঘনা ধনাগোদা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সাহেদ বলেন, নদী বা নদীর তীরবর্তী স্থানে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম। আমরা খুব দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা বাসির আলী খান বলেন, আমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নদী ও জলপথে অবৈধভাবে কোনো স্থাপনা গড়ে তোলা আইনত দণ্ডনীয়। এভাবে স্থাপনা গড়ে তোলা নদীর পরিবেশ ও চলাচলের জন্য হুমকি। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নদী দখল, পরিবেশ বিপর্যয় এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এই ত্রিমাত্রিক সংকটের মাঝে ধুঁকছে ধনাগোদা নদী। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যক্তি স্বার্থে জনসম্পদ দখলের এই প্রবণতা আর কতদিন চলবে প্রশাসনের চোখের আড়ালে? নদী বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন আইন প্রয়োগ, জবাবদিহিতা এবং প্রকৃত উদ্যোগ। নাহলে হারিয়ে যাবে শুধু একটি নদী নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি অঞ্চলের জীবন ও জীবিকা।

মঙ্গল বার, ০৩ জুন ২০২৫ খ্রি.

সোরিয়াসিস হলে কী করবেন?

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন

Loading

শেয়ার করুন