কম্পিউটারে তখনকার সময় আর এখনকার সময়
এশতিয়াক মাহমুদ : পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল সভ্যতা ও বিজ্ঞান বেশ এগিয়ে গেলেও হিসেব করার জন্য যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কার হয়নি। এ সময় বড় বড় যোগ বিয়োগ গুন ভাগ ইত্যাদির জন্য স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক কৌশলের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গণনা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।ষোড়শ শতাব্দীতে স্কটল্যান্ডের নেপিয়ার ভাগ ও কণের সহায়তার জন্য একটি যন্ত্রের প্রচলন করেন।
জার্মান জ্যোতিবিদ শিকার প্রথম স্বয়ং ক্রিয় হিসাবকারী যন্ত্র তৈরি করেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি নিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করা যেত। পিকার্তের যত্ন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৬৪২ সালে ব্রেইজ প্যাসকেল নামক ফরাসি উদ্ভাবক তৈরি করেন একটি যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর। বাবাকে হিসাবের কাজে সাহায্য করার তাগিদ অনুভর করেই প্যাঙ্কেল এ যন্ত্র তৈরি করেন এবং তাতে গিয়ার চালিত চাকা ব্যবহার করে এ নবযুগের সূচনা করেন। পরবর্তী তিনশ’ বছর ধরে প্রায় সব ধরনের ক্যালকুলেটর যন্ত্রে গিয়ার চাকার ব্যবহার ছিল। তার যন্ত্রে শুধু যোগ অথবা বিয়োগ করা যেত। কিন্তু প্যাঙ্কেল তার মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তির ফলে পুনঃপুন যোগ ও বিয়োগের মাধ্যমে গুণ ও ভাগ করার পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কার করেন। উল্লেখ্য যে, ক্যালকুলেটরসহ আধুনিক অনেক ইলেক্ট্রনিক গদ্ধতিতে এ কৌশল বিদ্যমান। খ্যাতনামা জার্মান পণ্ডিত উইলিয়াম লাইবনিৎস ১৬৭১ সালে চাকা ও দণ্ড ব্যবহার করে গুণ-ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। সে যুগে হা অপরিপক্ যান্ত্রিক ও সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ তৈরি করা অতিশয় কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও লাইবনিৎসের এ যন্ত্রই প্রথম বাণিজ্যিক ক্যালকুলেটর।
প্যাস্কেল ও লাইবনিৎস ক্যালকুলেটরকে তখন যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য মনে করা হত। পরে অবশ্য বিভিন্ন সময়ে যান্ত্রিক কৌশলের ক্রমোন্নতির ফলে ক্যালকুলেটরের গুণগত মান উন্নত হয়। বৈদ্যুতিক ক্যালকুলেটর প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটরই ছিল হিসাবের প্রধান সহায়। ১৭৮৬ সালে জার্মানির মূলার নামক গণিতবিদ ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’ বা ‘বিয়োগের যন্ত্র’ নামে পরিচিত একটি ক্যালকুলেটরের পরিকল্পনা করেন। এর প্রায় দুই যুগ পর ইংল্যান্ডের চার্লস বেবেজ এধরনের একটি যন্ত্র তৈরি করেন। ১৮১২ সালে ব্যাবেজ লগারিদমিক হিসাবসহ সে গাণিতিক হিসাবের জন্য আরও উন্নত একটি ‘ডিফারেন্স ইঞ্জিন’ এর পরিকল্পনা করেন এবং মেশিন তৈরির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করেন।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক বেবেজকে আর্থিক অনুদান দিত ব্রিটিশ সরকার। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ১৭ হাজার পাউন্ড অনুদানের বিষয়টি বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বিশাল সম্পত্তির মালিক বেবেজ ১৮৩৩ সালে ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ নামে একটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরি করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজ খরচে এ মেশিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। বেবেজের এ মেশিনের পরিকল্পনা আজও আধুনিক কম্পিউটারের মূলনীতি হয়ে আছে। বেবেজ আধুনিক কম্পিউটারের মত এ মেশিনের নিয়ন্ত্রণ অংশ, গাণিতিক অংশ, স্মৃতি অংশ, গ্রহণমুখ ও ও নির্গমনমুখ অংশগুলো চিহ্নিত করেন। স্মৃতি অংশে পঞ্চাশ অংশ দৈর্ঘ্যের এক হাজার সংখ্যা রক্ষণের পরিকল্পনাও ছিল তার এ মেশিনে।
পঞ্চাশ অংকের দুটো সংখ্যা বিয়োগ করতে এক সেকেন্ড এবং গুণের জন্য এক মিনিট সময় নেয়ার কথা ছিল রেবেজের পরিকল্পিত এ মেশিনে। অত্যন্ত উন্নত পরিকল্পনা ও মেধা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তির সেই অনুর্বর যুগে বেবেজের ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তারপরও তাকে ‘আধুনিক কম্পিউটারের’ জনক বলা যায়। তাছাড়া বেবেজের পরিকল্পনা ও ধারণার প্রতিফলন দেখা যায় উনবিংশ শতাব্দীর অসংখ্য • যন্ত্রে, গণিত শাস্ত্রে অনুরক্ত ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের কন্যা লেডি আঅ্যামা আপ্যন্ট। বেহেজের ‘এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন’-এর জন্য কিছু প্রোগ্রাম রচনা করেন। তিনিই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম। চেয়িতা।
ADA প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ কিরমবৃতিই বহন করে। চলেছে। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্সের জেমস। মেরি জেকার্ড ইউরোপের অন্যতম শিল্প বস্তু বুননের জন্য ছিদ্রযুক্ত কার্য বা পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করেন। ১৮৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডঃ হলিতিদ মেশিনের সঙ্গে সংযোগে সক্ষম এমন কার্ড সফলভাবে ব্যবহার করেন। তিনি তার উদ্ভাবিত সেনসাস মেশিন। Sensus machine)-এর কার্ড ব্যবহার করে ১৮৯০ সালের আদমশুমারী। মাত্র তিন বছরে সমাপ্ত করেন। অথচ পূর্ববর্তী শুমারীতে সময় লেগেছিল। গোটা দশ বছর। পূর্ববর্তীকালে পাঞ্চ কার্ড কম্পিউটারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
ঐ শতাব্দীর সত্তর দশক পর্যন্ত উপাত্ত। সংরক্ষণ ও কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগের জন্য পাঞ্চ কার্ডের বহুল প্রচলন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডঃ হলিরিখ ১৮৯৬ সালে ‘টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে বর্তীকালে অনুরূপ। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন’ সংক্ষেপে আইবিএম (IIBM) নামক বিশ্ববিখ্যাত কম্পিউটার নির্মাণকারী কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়। মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটর-এর যুগের পর আসে ইলেক্টো-মেকানিক্যাল গণনা যন্ত্রের যুগ। এতে রিলে (Relay) নামক এক ধরনের যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘ল্যাবরেটরী বেল’-এর ডঃ জর্জ স্টিবেজ ১৯৪০ সালে ‘কমপ্লেক্স। ক্যালকুলেটর’ নামক একটি রিলে কম্পিউটার তৈরি করেন। চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে বেল ল্যাবরেটরীতে যেসব রিলে কম্পিউটার তৈরি। গেলেও বড়
হয়েছে, তার মধ্যে বেল-৪ ও বেল-৫ উল্লেখযোগ্য।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়ার্ড এইকিন এর তত্ত্বাবধানে তৈরি মার্ক-১ ছিল অটোমেটিক সিকোয়েন্স কন্ট্রোলার (Automatic Sequence Controller) যুক্ত। এটি ছিল আইবিএম ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রয়াস। সাধারণ গাণিতিক কাজসহ ত্রিকোণমিতি সংক্রান্ত ফাংশন এবং আরও জাটিল গাণিতিকি কাজে এ মেশিন ব্যবহার করা সম্ভব। বেবেজের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মার্ক ১-ই বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় হিসাবকারী যন্ত্রি। দৈর্ঘ্য ৫১ ফুট ও উচ্চতা ৮ ফুট। মার্ক ১-এর সঙ্গে সাত লক্ষাধিক যন্ত্রাংশকে সংযোগের জন্য ৫০০ মাইল লম্বা তারের প্রয়োজন হয়।
৫ টন ওজন বিশিষ্ট মেশিনটি ১৫ বছর চালু ছিল।১৯৪২ সালে বায়ুশূন্য টিউব বা বাল্ব ব্যবহার করে একটি ছোট ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডঃ জন অ্যাটানসফ ও তার সহকারী ব্যারি। তাদের নামানুসারেই এই কম্পিউটারের নাম করা হয় ABC। এটি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পেনসিল ভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন মোসলে ও তার ছাত্র প্রোসপার ১৯৪৬ সালে ‘ইলেক্ট্রনিক নিউম্যারিকল ইন্ট্রিগ্রেটর অ্যান্ড ক্যালকুলেটর’ Electronic Numerical Integrator and Calculator) সংক্ষেপে এনিয়াক (ENIAC) নামের একটি কম্পিউটার তৈরি করেন। ৩০ টন ওজন বিশিষ্ট এবং ১৯ হাজার ইলেক্ট্রনিক টিউব দিয়ে নির্মিত এ কম্পিউটারের জন্য ১৩০।
কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হত। পরবর্তী সময়ে ক্যাব্রিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মরিস উইলকিস ১৯৪১ সালে EDSAC নামের একটি কম্পিউটার তৈরি করেন। ৩০ টন ওজন বিশিষ্ট এবং ১৯ হাজার ইলেক্ট্রনিক টিউব দিয়ে নির্মিত এ কম্পিউটারের জন্য ১৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হত। পরবর্তী সময়ে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মরিস উইলকিস ১৯৪৯ সালে EDSAC কম্পিউটার নির্মাণ করেন। এ কম্পিউটারে বিখ্যাত গণিতবিদ জন ফন নুরম্যান কর্তৃক ‘স্মৃতিতে রক্ষিত প্রোগ্রাম’ নির্মাণের বাস্তবায়ন ঘটে। ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে হায়াইল উইন্ড-১ নামক কম্পিউটার নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ডঃ জন আসলে ও প্রোসপার ‘ইউনিভার্সেল অটোমেটিক কম্পিউটার’ Universal Automatic Computer) নাম য়ে এমন একটি কম্পিউটার নির্মাণ করেন যা সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি ‘ইলেকট্রনিক কম্পিউটার’ হিসেবে পরিগণিত হয়। রূপর থেকে বিভিন্ন কোম্পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কম্পিউটার নির্মাণ করেন। ‘৭০১ মেশিন’ দিয়ে আইবিএম কোম্পানি ১৯৫৪ সালে কম্পিউটার ব্যবসার সূত্রপাত করে।
পরবর্তীতে ৬৫০ ও ৭০০ সিরিজ আইবিএম-এর কম্পিউটারগুলোও ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করে। ইলেক্ট্রনিক্স-এর জগতে ততদিনে বিপুল উন্নতি সাধিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের পর কম্পিউটারে বাল্বের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে কম্পিউটারের আকার অনেক ছোট হয়ে আসে। নির্ভরশীলতা ও গতি বেড়ে যায়, বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়, সর্বোপরি দামও কমে যায়। ট্রানজিস্টর দিয়ে শুরু হয় কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্ম। ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশন ১৯৬৪ সালে ২য় প্রজন্মের সফলতম মেশিন পিডিবি-৪ বাজারজাত শুরু করে।১৯৬৪ সালে ঢাকার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে আইবিএম-১৬২০ কম্পিউটারটি স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয়, এর কিছুকাল পরেই ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার উভয় জগতেই এক অসাধারণ বিপ্লব সাধিত হয়, আর তা হল ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি বা চিপের আগমন। এ
র অভ্যন্তরে অসংখ্য অর্ধপরিবাহী ডায়োড ট্রানজিস্টর (Diode Transistor) ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ থাকে। অথচ এটি আকারে খুব ছোট হয়। ফলে কম্পিউটারের আকৃতি অনেকাংশে ছোট হয়ে আছে।১৯৬৫-১৯৭১ সালের মধ্যবর্তী সময়কে তৃতীয় প্রজন্ম ধরা হয়। এ সময় প্রচুর পরিমাণে ‘হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহৃত হতে থাকে। আইসি’ দ্রুত উন্নতির ফলে পুরো ‘সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট’ (Centra Processing Unit)-কে একটি চিপের আকারে নিে আসা হয়। মাইক্রোপ্রসেসর বলে অভিহিত করা হয় এটিকে।ইন্টেল কোম্পানি ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম ৪০০৪ নামক ২২০০ ট্রানজিস্ট সম্বলিত মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করেন। শুরু হয় কম্পিউটারের চত প্রজন্ম। ঐ সময়ই মিনি কম্পিউটারের প্রচলন শুরু হয়। আশির দশতে ছোট আকারের আইসতে লাখ লাখ ট্রানজিস্টর বসানোর কৌশল আয় এনে কম্পিউটার ব্যবহার বিপ্লব সাধিত হয়েছে।
পিসি বা পারসোন কম্পিউটার এর ব্যাপক প্রচলন এবং অসংখ্য কম্পিউটার চতুর্থ প্রজনোর শুরুর দিকে কয়েকটি মেশিন হল আইবিএম-৩০৩৩, এইচপি-৩০০০ আইবিএম-৪৩৪১, টিআরএস ৮০, শার্প-১২১১, আইবিএম পিসি ইত্যাদি। নব্বই দশকে বিপুল উন্নতি সাধিত হয় কম্পিউটারের। ইন্টেল -এর পেন্টিয়াম ও প্রো-পেন্টিয়াম প্রসের এনে দিয়েছে সুপার কম্পিউটারের ক্ষিপ্রতা। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৩.১, ৯৫, ১৭ প্যাকেজ প্রোগ্রাম বাজার মাত করে দিয়েছে। সর্বশেষে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তায় ভেসে যাচ্ছে বিশ্ব। সান মাইক্রোসিস্টেমের জাভা টেকনোলজি বিভিন্ন প্রকার হার্ডওয়্যারকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে।
যোগাযোগের মাধ্যম ও বিনোদনের বিশাল ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাপক ভিত্তিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন গ্রাহকের সঙ্গে স্বল্প খরচে তথ্য আদান-প্রদান, কথাবার্তা, টেলিফোন ইত্যাদি করা যাচ্ছে। গ্রাফিকসের কাজ এতই উন্নত হয়েছে যে, শুধুমাত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীর ছবি দিয়েই এখন সিনেমা তৈরি সম্ভব, অভিনেতাদের অভিনয় করতে হবে না। এরই মধ্যে আমরা যে সব মডেলের কম্পিউটার পেয়েছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউনিভাক-১, আইবিএম-৬৪০, সিস্টেম-৩৬০, এডসাক, আইসিএল-২৯০০, ৪৩০০ সিরিজের মেইনফ্রেম মডেল, পঞ্চম পর্যায়ে সুপার কম্পিউটারসিভার-২০৫, ক্রো-১ ও ক্রো-২।কম্পিউটার যদিও একটি হিসাবকারী যন্ত্র, কিন্তু হিসাবের চেয়ে অন্য কাজেই তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহার ঘটে চলেছে। আবিষ্কারের ইতিহাসে যত বিস্ময়কর আবিষ্কার আছে শুধুমাত্র কম্পিউটার ছাড়া অন্য কোন জিনিসের এত ব্যাপক ব্যবহার হয় না। যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক অনেক কাজের নির্দেশ কম্পিউটারের স্মৃতিতে সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং প্রয়োজনে একটির পর একটি করে সে সব নির্দেশ নির্ভুলভাবে দ্রুত সমাধান দিয়ে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে কম্পিউটার।
কম্পিউটার এমন একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যা অগণিত উপাত্ত বা তথ্য গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এর উৎস হচ্ছে ইলেক্ট্রন। এর গতি, বিশ্বস্ততা ও নির্ভরশীলতা মানুষের অনুরূপ ক্ষমতার তুলনায় অনেক উন্নত। লাইন প্রিন্ট, কার্ড রিডার, টাইপ রাইটার, কার্ড পাঞ্চিং, টেপ ট্রানজিস্টর, ম্যাগনেটিক সার্কিট ইত্যাদি সর্বাধুনিক গণনামূলক ব্যবস্থাই হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটার ইলেক্ট্রনিক কৌশলের এক চমৎকার প্রয়োগ- যার আছে তিনটি বৈশিষ্ট্য- দ্রুতগতি, ভ্রমশূন্যতা ও স্মৃতিভান্ডার কম্পিউটারের নিজস্ব সাংকেতিক ভাষা আছে। এহেন বিস্ময়কর যন্ত্র আবিষ্কারের সঙ্গে যাদের নিরলস সাধনা জড়িত হয়ে আছে, তাদের প্রতি রইল আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাবোধ।
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?