সার্ক-এর সমস্যা, সম্ভাবনা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আঞ্চলিকতাবাদ ব্যাপক প্রসার লাভ করে। একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার তাগিদ থেকেই এই আঞ্চলিকতাবাদের জন্ম। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বাধ্যবাধকতা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা গঠিত হয়। এমনি একটি আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক বা South Asian Association for Regional Co-operation) সংক্ষেপে SAARC। দক্ষিণ এশিয়ায় গঠিত সার্ক। একটি আঞ্চলিক সংগঠন, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পারস্পরিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। সার্ক গঠনের প্রেক্ষাপট ও পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর দেশগুলোর সারিতে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ-ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ এবং ভুটান অশিক্ষা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, জনস্ফীতির চাপে কম-বেশি জর্জরিত। পশ্চিমের উন্নত দেশগুলো এই দেশগুলোকে “অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চল” বলে চিহ্নিত করেছে।

এই সাতটি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দিক দিয়ে যতই বিরোধ থাকুক না কেন, সহমতের ভিত্তিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার আদান-প্রদানের মাধ্যমে কিভাবে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠা যায়, সেই চিন্তার ফলশ্রুতি হলো এই সার্ক।১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের রাষ্ট্র প্রধান/সরকার প্রধানদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সার্ক এর জন্ম হয়। এটি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয় আরও পাঁচ বছর পূর্বে যখন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের মে মাসে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি ওয়ার্কিং পেপার পাঠানো হয় এ অঞ্চলের বাকি ৬টি দেশে। উক্ত পেপারে ১১টি বিষয়ে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়। এগুলো হলো-১. আবহ বিদ্যা ২. টেলি কমিউনিকেশন ৩. জাহাজ চলাচল ৪. যাতায়াত ৫. ভ্রমণ ৬. কৃষি ৭. যৌথ উদ্যোগ ৮. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৯. নির্দিষ্ট পণ্যের বাজার ১০. শিক্ষা ও কারিগরি বিদ্যা এবং ১১. সংস্কৃতি। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনার উদ্দেশ্যে ১৯৮১ সালের এপ্রিলে কলম্বোতে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের পররাষ্ট্র সচিবদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলন স্থির হয় যে, দ্বি-পাক্ষিক এবং বিরোধপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে না। ১৯৮১ সালে ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র সচিবদের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনার পর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালের প্রথমদিকে থিম্পুর বৈঠকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ঢাকায় ডিসেম্বর ১৯৮৫-এ প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনে ৭টি দেশের রাষ্ট্র সরকার প্রধান সার্ক ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেন, যা ঢাকা ঘোষণা’ নামে পরিচিত।

সার্কের লক্ষ্যঃ সার্ক সনদে ৮টি লক্ষ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো: ১. দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ ও জীবনযাত্রার উন্নতি সাধন। ২. এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা, প্রত্যেক মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন এবং তার ব্যাক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশের সুযোগ প্রদান; ৩. দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা দান; ৪. একে অপরের সমস্যা অনুধাবন, ৭ পারস্পারিক বিশ্বাস ও ও সমঝোতায় সাহায্য দান: ৫. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতা দান; ৬.প্রথম উড়ানশীল দেশের যাে • সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, ৭. আন্তর্জাতিক সংগঠনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতারও বিভাগ এবং ৮. এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা করা।

সার্কের মূলনীতি : সার্ক সনদে সংস্থার তিনটি মূলনীতির কথাও উল্লেখ করা হয়। তাহলো:
১. সার্বভৌমত্বের সমতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত পরস্পরের সুবিধার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ভিত্তিতে সার্ক- -এর কাঠামোর ভিতর সহযোগিতার নীতির সঠিক বাস্তবায়ন।
২. এ ধরদের সহযোগিতা দ্বি-পাক্ষিক কিংবা বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয় না হয়ে বরং সম্পূরকই হবে।
৩. এ ধরনের সহযোগিতা দ্বি-পাক্ষিক কিংবা বহুপক্ষীয় বাধ্যবাধকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্য হবে না।
সার্কের উদ্দেশ্য: সার্কের কতকগুলো উদ্দেশ্য আছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে।
১. দক্ষিণ এশীয়দের জীবনযাপনের মান উন্নত করা।
২. দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো।
৩ সামাজিক অগ্রসরতা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ নিশ্চিত করা।
৪. নাগরিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন এবং তাদের সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচিত করা। নাজিন এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে আরো জোরদার করা।
৫. একে অপরের বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা।
৬. সার্কের মত আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠান থাকলে দক্ষিণ এশিয় দেশসমূহে যুদ্ধের ভয়বহতা টান টান উত্তেজনা কমে যাবে। ফলে যুদ্ধের পেছনে সামরিক খাতে অর্থ বরাদ্দ কমে যাবে।
৭ . সার্কভুক্ত দেশসমূহ সমন্বিত যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করার মধ্যে নিজ নিজ দেশের জন্য লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বহুজাতিক কর্পোরেশনের দৌরাত্ম্য কিংবা মুনাফা লাভ করার সুযোগ কমে যাবে বা থাকবে না।
৮.সার্কভুক্ত দেশসমূহ এবং দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহ একটি এক অভিন্ন পরিবেশ বলয়ের মধ্যে অবস্থিত। সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে সব দেশই উপকৃত হবে। এই এক এবং অভিন্ন মন্ডলের দু’টি বিশেষ বৈশিষ্ট। হিমালয়ের জলমন্ডল এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চল। এ দু’মন্ডলেই রয়েছে। অফুরন্ত সম্পদ। সার্ক সুচারুরূপে কাজ করলে সদস্যভুক্ত দেশসমূহ প্রযুক্তি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে হিমালয়ের সম্পদ এবং ভারত মহাসাগরের সম্পদ লাভে সমর্থ হবে।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলনসমূহ : প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৬ সালে ভারতের বাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের প্রতিরোধ, জোটনিরপেক্ষতা, পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি সম্পাদন করা, বিভিন্ন পেশার লোকদের মধ্যে সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তৃতীয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৭ সালে নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি খাদ্য নিরাপত্তা ভাঙার গড়ে তোলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ, পরিণাম সম্পর্কে অনুসন্ধান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণের সিদ্ধান্ত, শিল্প ও বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচিত হয়। চতুর্থ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৮ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা সহযোগিতা, সার্কভুক্ত দেশের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি এবং পার্লামেন্ট সদস্যদের বিশেষ সার্ক ভ্রমণ সার্ক ভ্রমণ দলিল দেয়া, খাদ্য, ব ঘোষণা করা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। ষষ্ঠ সার্ক বস্ত্র, বাসস্থান-এর সুবিধা অর্জন এবং ১৯৯০ সালকে ‘শিশু কন্যার সার্ক বর্ষ’ হিসেবে শীর্ষ সম্মেলন ১৯৯১ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ‘সাউথ এশিয়ান প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এ্যারেঞ্জমেন্ট’ বা ‘সাপটা’ (SAPTA) গঠনের প্রক্রিয়া অনুমোদিত হয়। ‘সার্ক পরিবেশ বর্ষী ঘোষিত হয়।

সপ্তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সার্ক তৎপরতার ক্ষেত্রে সমন্বিত কর্মসূচিকে আরো সুসংহত ও জোরদার করা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও অবক্ষয় রোধে জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সর্ব পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অষ্টম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন নায়াদিল্লীতে ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ২০০২ সালের মধ্যে সার্কভুক্ত দেশসমূহের দারিদ্র্য নির্মূল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নবম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৯৭ সালের মে মাসে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনের আলোচনা শেষে ৭টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা একটি ১২ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ঘোষণার প্রধান বিষয়গুলো হচ্ছে-

১. সম্মেলনের উপজীব্য বিষয় ছিল ‘দ্বিতীয় দশকের অভিযাত্রার সার্ক’।

২ . বাণিজ্যের বাধা দূর এবং সন্ত্রাস দমনের অঙ্গীকার। ৩. নারী ও শিশু পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান।

৪. ২০০২ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে দারিদ্র্য নির্মূলের অঙ্গীকার। ৫. ২০০১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অবাধ বাণিজ্য এলাকা গঠনের অঙ্গীকার।

৬. মাদক দ্রব্য পাচার রোধের অঙ্গীকার।
৭. ২০০০ সাল নাগাদ সকর্ম সংস্থান এবং অন্যান্য আর্থিক ও ব্যবসার সেবা কাজে বিশেষ করে নারীসহ বিশ্বের ১০ কোটি দরিদ্র পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতাভুক্ত করতে বিশ্বব্যাপী প্রচার অভিযানকে অভিনন্দন।

এরপর থেকে অন্যান্য সম্মেলন গুলো হলো: ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশ: ১২-১৪ নভেম্বর ২০০৫ তারিখে ঢাকায় ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি এবং নেপাল ও ভুটানের রাজা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। চতুর্দশ সামিট ভারত: সার্কের চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলন ভারতের নয়াদিল্লিতে ৩-৪ এপ্রিল ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে আফগানিস্তান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি এবং ভুটান, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার। শীর্ষ সম্মেলনে আন্তঃআঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।এরপর সপ্তদশ শীর্ষ সম্মেলন মালদ্বীপ:অ্যাডু কনভেনশন সেন্টার, ১৭ তম সার্ক সম্মেলনের স্থান।

সপ্তদশ শীর্ষ সম্মেলন মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে ১০-১১ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নিরক্ষীয় কনভেনশন সেন্টার , অ্যাডু সিটিতে অনুষ্ঠিত এই সভাটি সার্কের বিদায়ী চেয়ার, ভুটানের রাজকীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী, হাই লিওনচেন জিগমি ইয়েজার থিনলি দ্বারা উন্মুক্ত করেন। মোহাম্মদ নাশিদ ১৭তম সার্ক সম্মেলনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নাশিদ তার উদ্বোধনী ভাষণে সহযোগিতার তিনটি ক্ষেত্র তুলে ধরেন যেগুলোতে অগ্রগতি হওয়া উচিত; বাণিজ্য, পরিবহন এবং অর্থনৈতিক একীকরণ; নিরাপত্তা সমস্যা যেমন জলদস্যুতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন; এবং সুশাসন। রাষ্ট্রপতি দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্যের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য একটি কমিশন গঠনের জন্য সদস্য দেশগুলির প্রতি আহ্বান জানান।সার্কের সকল সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান সভায় বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী বৈঠকে সার্কের সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র/পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সার্কের মহাসচিব, পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলের প্রধান, মালদ্বীপের মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী, সফররত প্রতিনিধিদলের মন্ত্রীরা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।মহাসচিব তার ভাষণে বলেছিলেন যে “বিল্ডিং ব্রিজ” থিমের অধীনে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনটি অনেকগুলি সেতু নির্মাণের জন্য আরও গতি ও গতি প্রদান করে যা নির্মাণ করা দরকার: অসম অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আয় বন্টনের ফলে তৈরি ব্যবধানগুলি পূরণ করা থেকে নারী ও পুরুষের সমতাকে স্বীকৃতি ও সম্মান করার ক্ষেত্রে, অভিপ্রায় এবং বাস্তবায়নের মধ্যে স্থান বন্ধ করে দেওয়া। এই বৈঠকে, সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চারটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন:প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য সার্ক চুক্তি।সামঞ্জস্য মূল্যায়নের স্বীকৃতির উপর বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সার্ক চুক্তি।আঞ্চলিক মান বাস্তবায়নে সার্ক চুক্তি।সার্ক বীজ ব্যাংক চুক্তি।এছাড়া সপ্তদশ সার্ক সম্মেলনের আড্ডু ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়।

সার্কের সাফল্য :সার্কের মাধ্যমে আনকগুলো সাফল্য অতিও হয়েছে :

১. সার্কের সুবাদে এই অঞ্চলে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর গবেষণা কাজ হয়েছে। এসব গবেষণা ও কাজের আদান-প্রদানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের।এক মূল্যবান সংযোজন। সহযোগিতার বাস্তবতা অনুধাবন আরে সহজতর হয়েছে। তাছাড়া এসব গবেষণা ও কাজ আঞ্চালিত জ্ঞান-গরিমার এক মূল্যবান সংযোজন।

২. সরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যে, শীর্ষ সম্মেলনের সময় সার্কের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ সার্ক আলোচনার বাইরে ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হয়ে। নের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দ্বি-পাক্ষিক ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে মত বিনিময়ের সুযোগ পান। উদাহরণস্বরূপ ইসলামাবাদে ৪র্থ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় ও রাজীব গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো সার্কের আলোচনার শেষে একে অন্যের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ না করা সংক্রন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

৩. দক্ষিণ এশীয় খাদ্য নিরপয়া সংরক্ষণের সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে। ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বাংলাদেশ এখন থেকে আর নিজায় মজুদের বাইরেও সার্কের অপর দেশের মজুদ থেকে তার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে খাদ্য শস্য ব্যবহার করেছে
৪. সাপটা চুক্তির আলোকে ইতোমধো অদৃশ্য দেশগুলো গরপারের পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে শুভ রেয়াতসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করেছে। অবাধ বাণিয়া অঞ্চল প্রতিষ্টিত না হওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণের ব্যাপারেও সার্ক নেতৃবৃন্দ একমত হয়েছেন।

সার্কের ব্যর্থতা : সফলতার পাশাপাশি সার্কের কিছু ব্যর্থ দিকও রয়েছে।
১. দক্ষিণ এশিয়ার কোনো বহিঃস্থ শত্রু নেই। বরং নিজেরা নিজেদের হুমকি মনে করে। নিরাপত্তা সম্পর্কে ঐকমত্য না থাকায় সার্কের বন্ধ বন্ধন তেমন সুদৃঢ় হয়নি।
২. আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্র নীতিতেও অভিন্নতা থাকা আবশ্যক। পররাষ্ট্র নীতিতে অভিন্নতা দক্ষিন এশিয়ায় জোর সহযোগিতা পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক।
৩. ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশসমূহের দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা এবং ভারতের বড় ভাই সুলভ আচরণ সার্কের গতিকে নিষ্ক্রিয় করে মাঝে মাঝে।
৪. দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির বৈশিষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতামূলক অর্থাৎ সম্পূরক নয়। অর্থাৎ এক জাতীয় পণ্যে সদ সদস্য, দেশগুলো বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। ফলে ‘তুলনামূলক অসুবিধা” এই অঞ্চলে বাণিজ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা অসুবিধাজনক।

সার্কের ভবিষ্যৎ : এখন পর্যন্ত অসংখ্যক ক্ষেত্রে সার্ক কিছুটা সাফল্যের মুখ দেখেছে।দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং এখানকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনতে সার্ক অনেকটাই সফল হয়েছে। এজন্য যা করা প্রয়োজন তা হলো আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সদ্ব্যবহার, সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মাঝে যৌথ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা পভৃতি। “সার্ক রাজনৈতিক অর্থনীতি” গ্রন্থের লেখক বলেন, একটি সফল ও গতিশীল আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য ৪টি রাজনৈতিক পূর্বশর্ত একান্তই প্রয়োজন। সেগুলো হলো:

১. বাইরের ও ভিতরের কিংবা উভয় প্রান্ত থেকে হুমকি বা ভীতি প্রদর্শনের উৎসস্থল সম্পর্কে এক ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ-এর ফলে জোটভুক্ত দেশসমূহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সুচিন্তিত এবং অভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।
২. জোটভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে আদর্শগত এবং রাজনৈতিক বিষয়ে মিল থাকবে।
৩. জোটভুক্ত দেশসমূহের পররাষ্ট্র নীতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং আঞ্চলিক ক্ষেত্রে তার রূপান্তর প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে এক এবং অভিন্ন চিন্তা চেতনা ধারণা করা।
৪. জোটভুক্ত দেশসমূহের মাঝে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকতে হবে।

উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে সার্কভুক্ত দেশসমূহের মোট বাণিজ্যের পরিমান ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার। আবার এসকল দেশের আমদানির পরিমান প্রায় কয়েক’শ বিলিয়ন ডলারের উপরে।

তারা নিজেদের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাড়াতে পারে তাহলে বাণিজ্যিক দিক থেকে সার্ক একটি অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক শক্তিশালী সংস্থা উঠবে। উপরন্ত, সার্কের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।

এশতিয়াক মাহমুদ, আদর্শ মুসলিম পাড়া চাঁদপুর।

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?

Loading

শেয়ার করুন