হোটেল জোনে ‘টর্চার সেল’-এর ঘটনায় হাজীগঞ্জের একজনসহ গ্রেফতার ৩

নিউজ ডেস্ক :

 কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনে জিম্মিদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের কাজে ব্যবহৃত অপহরণকারী চক্রের দুইটি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছে র‍্যাব। যেখানে অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ জিন্মি ৫ জনকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা পুলিশের এক বহিষ্কৃত উপ-পরিদর্শকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শনিবার (২০ মে) বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী। তিনি জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।

গ্রেফতাররা হলো— চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার মাইতুল সরকার বাড়ী এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০), কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে এম টি মুন্না (৩০) এবং একই এলাকার মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (২৮)। গ্রেফতারদের মধ্যে এসএম ইকবাল পারভেজ পুলিশের বহিষ্কৃত সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং এম টি মুন্না সম্পর্কে তার আপন শ্যালক।

উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম ঢাকার উত্তরা এলাকার বাসিন্দা, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের বাসিন্দা এক রোহিঙ্গা দম্পতি এবং অপর একজন কক্সবাজারের বাসিন্দা।

র‍্যাব জানিয়েছে, গত ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ইকবাল পারভেজ পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত অবস্থায় চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র‍্যাবের হাতে আটক হয়েছিল। এছাড়াও সীতাকুণ্ড থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি পুলিশের চাকরিও হারায় সে। পরে জামিনে বের হয়ে মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী আরও জানিয়েছেন, কক্সবাজারকেন্দ্রিক ভয়ংকর এই অপহরণ সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর শুক্রবার রাতে একের পর এক তাদের সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে বন্দি এক নারীসহ পাঁচ জনকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ সময় চক্রের মূল হোতা পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজসহ চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়।

তিনি জানান, কক্সবাজার র‌্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি চৌকস দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উদ্ধার হওয়া ঢাকার মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গত ১৬ মে নিখোঁজ হন। পরবর্তী সময়ে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের তরফ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের।

অপহরণ-চক্রে
কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্যরা। স্বামীর ওপর চলতে অমানবিক নির্যাতন। অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদের ছাড়া হয়নি। স্বজনেরা বিষয়টি র‌্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে কাজ শুরু করে। এরপর সন্ধান মেলে দুটি টর্চার সেলের; যার একটি কলাতলী এবং অপরটি সুগন্ধা পয়েন্টে।

এর আগে ২০২২ সালে আগস্ট মাসের শুরুতে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে কাটেজ এলাকায় আরও একটি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। সেখানে আটকে রাখা পর্যটকসহ চার জনকে উদ্ধার করে ১১ জনকে আটকও করা হয়েছিল।

Loading

শেয়ার করুন