প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসা ক্যান্টিন বয় শিশু রাব্বি এখন চাঁদপুরে

নিউজ ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসা হাসপাতালের ক্যান্টিন বয় শিশু রাব্বি এখন চাঁদপুরে অবস্থান করছে। সে সরকারি একটি গাড়িত করে গত রোববার রাত সোয়া ৯টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি আশ্রিত ঘরে তার মায়ের কাছে পৌঁছায়। এ সময় সঙ্গে তার সৎ বাবা ও বোন জামাই ছিলেন।

এলাকাবাসী জানায়, রাব্বি দীর্ঘ দেড়মাস পর মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। খবর পেয়ে রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত অধিকাংশ নারী-পুরুষ ও শিশু ছুটে আসেন রাব্বিকে এক নজর দেখতে। এতে খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রাব্বির পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী।

রাব্বির বোন জামাই সুজন জানান, ঢাকা থেকে সরাসরি জীবনে প্রথমবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সরকারি গাড়িতে চড়ে মায়ের কোলে ফিরতে গিয়ে অনেকটাই ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে রাব্বি। সে কারো সাথে কথা বলতে পারেনি। সাথে সাথে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া মা রাবেয়া আক্তার বলেন, আমি আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করছি আমার ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। আর শোকরিয়া আদায় করছি ও দোয়া জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কারণ আমার এই কষ্টের জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার শিশু সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন।

তিনি বলেন, রাব্বির যখন এক বছর বয়স তখন আমরা চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের ছিলাম। আমার প্রথম স্বামী রাব্বির বাবা তখন মারা যান। এভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন স্বামী হারানোর পর পেটের দায়ে শিশু ছেলে রাব্বি ও দশ বছর বয়সী মেয়ে সোনিয়া আক্তার কেয়ার খাবার জোগাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করি। কখনো কখনো পুরাণবাজারে সুতার মিলেও কাজ করি। এভাবে কয়েক বছর যাবার পর বাধ্য হয়ে আবার বিয়ে বসি দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তার সাথে পুরাণবাজার থেকে চলে আসি রামদাসদী আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানে নিকট আত্মীয়ের এই ঘরে ওই ঘরে প্রায় দুই বছর ধরে আশ্রয় নিয়ে আছি।

বর্তমানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের তফুরা বেগম নামে একজনকে বোন ডেকে তার ঘরে আশ্রিত আছি। সেখানে মাসে শুধু ২শ’ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকি। এসব কারণে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারিনি। নিরুপায় হয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেই। ছেলে রাব্বি গ্রামের একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সংসারের হাল ধরতে এলাকায় নানা কাজে লেগে যায়। তার বয়স এখন প্রায় ১৩ বছর। গত প্রায় দেড়মাস আগে তার বোনজামাই রাব্বিকে ৩ হাজার টাকা বেতনে ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে ক্যান্টিন বয় হিসেবে কাজ জোগাড় করে দেয়।

আর সেখানেই আমার ছেলে রাব্বি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখে সে তার নানীর মতো দেখাচ্ছিল মনে করে কাছে যেতে চায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে রাব্বি। আর তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে রাব্বির জীবনে যেন সুখবর বয়ে আসে। কিন্তু আমার ঘর নাই, বাড়ি নাই, জমি নাই। এই রাব্বিকে নিয়ে আমরা কোথায় থাকবো, কীভাবে থাকবো জানি না। তারপরও আমি চাই প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের ভবিষ্যৎটা গড়ে দিবেন।

শনিবার ঢাকার চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে ১০ টাকায় টিকেট কেটে সাধারণ রোগীদের সাথে চোখ দেখাতে গিয়ে চাঁদপুরের রাব্বির দিকে নজর পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আর তখনই প্রধানমন্ত্রী নিজে ছুটে যান রাব্বির কাছে। সবার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রাব্বির খোঁজ খবর নেন। সাথে সাথেই প্রধানমন্ত্রী রাব্বির পড়াশোনাসহ সব দায়িত্ব নিয়ে চাঁদপুরে পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা রাব্বির বাড়ি ঘরের খোঁজ খবর নেই। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসলেই যা যা করণীয় তা করা হবে। গত সোমবার সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা ও দৈনন্দিন খাদ্য সামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, তেল লবণসহ অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

Loading

শেয়ার করুন