ঠোঁটের সমস্যা ও প্রতিকার
আমাদের শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল ত্বকের অন্যতম হচ্ছে ঠোঁটের ত্বক। ঠোঁটের ত্বকের গঠন প্রকৃতি শরীরের অন্য স্থানের ত্বকের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। ঠোঁটের ত্বকে শরীরের অন্য স্থানের ত্বকের মতো চুল,রঞ্জক পদার্থ মেলানিন ও তৈলাক্ত পদার্থ সিবাম নিঃসরণকারী সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে না।এতে ঠোঁট সহজেই রোদে পুড়ে শুকিয়ে যায়। ঠোঁটে বিভিন্ন কারণে ছোট-বড় অনেক সমস্যা সহজেই দেখা দেয়। ঠোঁটের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা,তার কারণ ও প্রতিকার নিয়েই আজকের লেখা।
শুষ্ক আবহাওয়া
বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেলে অর্থাৎ শুষ্কতা বেড়ে গেলে আমাদের ত্বক দিয়ে বেরিয়ে আসা পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। ফলে ত্বকের ওপরের স্তর অত্যধিক শুষ্কতার কারণে চটচট করে ফাটতে থাকে। আর ঠোঁটে এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
অধিক মাত্রায় রোদ
যারা অধিকমাত্রায় রোদে ঘোরাফেরা করেন বা অধিক সময়ের জন্য রোদে কাজ করেন,তাদের ঠোঁট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কালো ও শুকনো হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া রোদে পুড়ে এক ধরনের প্রদাহেরও সৃষ্টি হয়।
প্রসাধনসামগ্রী
অনেক সময় ঠোঁটে ব্যবহারের বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী, যেমন, লিপস্টিক,লিপ লাইনার ইত্যাদি স্যুট না করার কারণে ঠোঁটে নানা ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ থেকে ঠোঁটের ত্বকে তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
জীবাণু সংক্রমণ
হারপিস সিমপ্লেক্স নামক একটি ভাইরাস আছে, যা সাধারণত ঠোঁটেই বেশি ইনফেকশন করে। ক্যানডিডা নামক ছত্রাক জাতীয় একটি জীবাণুও অনেকের ঠোঁটে সমস্যা করে থাকে। বিশেষ যৌনাচারের ফলেও ঠোঁটে বেশ কিছু সংক্রামক যৌনরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
ধূমপান
ধূমপান করার সময় প্রথমেই ঠোঁটের ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে ধুমপানের মাধ্যমে ঠোঁট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠোঁট ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া অনেকে পান খেয়ে থাকেন, যার সাথে থাকে চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড),খয়ের (রং), জর্দা (তামাক পাতা) খান। এগুলো ঠোঁটের জন্য নানা রকম ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়।
অতিরিক্ত গরম পানীয় গ্রহণ
নিয়মিত অতিরিক্ত গরম চা-কফি গ্রহণের ফলেও ঠোঁটের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে এবং ঠোঁটের কোমল ত্বক ধীরে ধীরে পুড়ে গিয়ে করতে পারে সৌন্দর্যহানি।
কিছু মুদ্রাদোষ
কিছু কিছু মুদ্রাদোষ আছে,যেমন,দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো,নখ দিয়ে ঠোঁটের চামড়া টানা,জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো এবং আঙ্গুল চোষার ফলে ঠোঁটের স্বাভাবিক সৌন্দর্য তো নষ্ট হয়ই-এ থেকে অন্য আরো অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দেয়।
আঘাতজনিত
অন্যের দাঁতের কামড়ে অথবা নিজের নকল দাঁত বা আঁকাবাঁকা ধারালো আল দাঁতের দীর্ঘ দিন ধরে একটানা আঘাতেও ঠোঁটের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কিছু চর্মরোগ
ঠোঁটের ত্বকে শ্বেতী রোগ খুব সাধারণ সমস্যা। এ রকম আরো কিছু চর্মরোগ আছে যেগুলো ঠোঁটকে আক্রান্ত করতে পারে।
অন্যান্য শারীরিক রোগ
শরীরের ভেতরের বিভিন্ন রোগের প্রতিফলন অনেক সময় ঠোঁটে আত্মপ্রকাশ করে থাকে বিভিন্নভাবে।
এসব নির্দিষ্ট সমস্যা ছাড়াও অনেকেই বিশেষ করে মেয়েরা বিব্রতকর সমস্যায় থাকেন কালো ঠোঁট নিয়ে এবং আমাদের কাছে এ সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন। হঠাৎ করে বিশেষ কোনো রোগে বা কোনো কারণে এ রকম হয়ে থাকলে তা হয়তো চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। তবে ঠোঁট কালো হলেই যে রোগ, তা নয়, অনেকের জন্য ত্বকের এ ধরনই স্বাভাবিক। পারিবারিক ও বংশানুক্রমিক টান,ব্যক্তিগত অভ্যাস ও জীবনধারাও অনেক সময় ঠোঁটের সৌন্দর্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ সমস্যা থেকে ঠোঁটকে মুক্ত রাখার উপায় ও ঠোঁটের পরিচর্যা সম্পর্কে কয়েকটি পরামর্শ দেয়া হলো :
আবহাওয়া শুষ্ক হলে ভ্যাসলিন,গ্লিসারিন ঠোঁটে ব্যবহার করতে হবে। এটি ঠোঁটের শুষ্কতা,রুক্ষতা এবং ফেটে যাওয়াকে দূর করে ঠোঁটকে নরম ও মোলায়েম রাখে।
তীব্র রোদে বেশি ঘোরাঘুরি যতদূর সম্ভব পরিহার করা উচিত। প্রয়োজনে রোদে কাজ করার সময় ছাতা, ক্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিগারেট,পান,সুপারি,গুল,জর্দা ইত্যাদি যতদূর সম্ভব পরিহার করা উচিত।
দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো,নখ দিয়ে ঠোঁটের চামড়া টানা,জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চোষা এরূপ অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
যে কোনো খাবার বা পানীয় অতিরিক্ত গরম অবস্থায় কখনো খাওয়া উচিত নয়।গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ঠাণ্ডা করে সেবন করা উচিত।
ঠোঁটে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন,যেমন, ফুলে যাওয়া,ব্যথা,চুলকানি বা জ্বালাপোড়া ইত্যাদি হলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সামনের দিকে ধারালো বা আঁকাবাঁকা,আসল বা কৃত্রিম দাঁত থাকলে তা একজন ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে ঠিক করে নিতে হবে
ঠোঁটের পাতলা সংবেদনশীল ত্বককে সব সময় আঘাত থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
সৌন্দর্য বিকাশে ঠোঁটের ভূমিকা অনেক। খাওয়া, কথা বলা ও পারিপার্শ্বিক আকর্ষণ বিনিময়ের সময় ঠোঁট ব্যবহৃত হয় বলে এর গুরুত্ব আরো বেশি। ঠোঁটের সামান্য সমস্যাও অবহেলা করা উচিত নয়।
ঠোঁটে ঘা হওয়ার কারণ
ঠোঁটের উপরে ঘা
১) যেকোনো প্রকার অ্যাসিডিক ফল খেলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। যেমন কমলা, লেবু, আনারস, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। তবে এগুলো খেলে যে এ রোগ হবেই এমনটা নয়। অনেক সময় এর গায়ে এক ধরনের পর্দা বা আবরণ থাকে যার কারণে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
২) আমাদের মুখে এক ধরনের কোমল টিস্যু থাকে কোন কারণে এই টিসু ক্ষতিগ্রস্থ হলে এটি হবার সম্ভাবনা থাকে।
৩) যে কোন প্রকার মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেলে এ রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
৪) সোডিয়াম লরেল সালফেট যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে এটি হবার সম্ভাবনা থাকে।
৫) যদি কোন খাবারে অ্যালার্জি থাকে তবে এ রোগ হতে পারে।
৬) সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ধূমপান করলে এটি হবার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।
ঠোঁটে ঘা হওয়ার কারণ –
ঠোঁটে ঘা হওয়া পরিত্রাণে ৬টি ঘরোয়া উপায়
১. তুলসি পাতা
ঠোঁটে ঘা হওয়া পরিত্রাণে তুলসি পাতা
এক মুঠো তুলসি পাতা।
৪-৮ কাপ পানি।
এবার এই পানির মধ্যে তুলসি পাতা দিয়ে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন। এবার পানি ছেকে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে নিন এবং ২ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
২. নারকেল তেল
ঠোঁটে ঘা হওয়া থেকে পরিত্রাণে নারকেল তেল
পরিস্কার আঙ্গুলে একটু নারকেল তেল নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগান।আপনি ইচ্ছা করলে এর সাথে সামান্য মোম মিক্স করে লাগাতে পারেন।
৩. লবঙ্গ তেল
ঠোঁটে ঘা হওয়া থেকে পরিত্রাণে লবঙ্গ তেল
হাফ চা চামচ অলিভ অয়েল।
১ টি লবঙ্গ গুঁড়া।
কটন বল।
গরম পানি।
প্রথমে গরম পানি নিয়ে ক্ষত স্থানে ভাব নিন। এরপর লবঙ্গ এবং অলিভ অয়েল একত্রে হাল্কা গরম করে ঠাণ্ডা করেও নিন। কটন বলে তেল নিয়ে ৫ মিনিট ক্ষত স্থানে লাগান।
৪. মধু
ঠোঁটে ঘা হওয়া থেকে পরিত্রাণে মধু
আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে মধুতে এন্টি ব্যাকটেরিয়া থাকে। দিনে কমপক্ষে ৩ বার ক্ষত স্থানে মধু লাগান। এতে খুব তাড়াতাড়ি কাজ হয়।
৫. অ্যালভেরা জেল
ঠোঁটে ঘা হওয়া থেকে পরিত্রাণে অ্যালভেরা জেল
১ টেবিল চামচ অ্যালভেরা জেল।
১ টেবিল চামচ পানি।
দুটি উপাদান ভালভাবে মিক্স করে দিনে ৩ বার ক্ষত স্থানে লাগান। এতে ব্যথা এবং জ্বালা ভাব কমে যাবে।
৬. কুসুম গরম লবণ পানি
ঠোঁটে ঘা হওয়া থেকে পরিত্রাণে গরম লবণ পানি
১/৪ কাপ গরম পানি।
১/২ চা চামচ লবণ।
এটি ভালোভাবে মিক্স করে দিনে ২ বার ক্ষত স্থানে লাগান যতক্ষণ পর্যন্ত সেরে না যায়।
টিপস
১) ক্ষত থাকা কালীন এসিডিক খাবার না খাওয়াই ভাল।
২) ক্ষত সারানোর জন্য উপরের উপাদানগুলো ট্রাই করুন।
৩) ফ্রেশ টক দই খেতে পারেন।
৪) ক্ষতে বেশি হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরও পড়ুন :
- অর্শ বা পাইলস: কারণ, লক্ষণ, করণীয়, খাদ্যাভ্যাস, চিকিৎসা
- ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির সহজ উপায়
- যৌন সমস্যার কারণ লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
- শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও প্রতিকার
- রং ফর্সা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়
- ৫ উপায়ে অর্শ বা পাইলস সারিয়ে তুলুন
- যৌনমিলনে সমস্যা ও মিলন দীর্ঘস্থায়ী করতে কিছু টিপস
- কালোজিরার অবাক করা ৭টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
- মানসিক রোগে করণীয়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ৪ প্রাকৃতিক উপায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়
- ক্যানসার চিকিৎসায় যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার
- অ্যালার্জি দূর করবে ৫টি খাবার
- সোরিয়াসিস : কারণ ও প্রতিকার
- নারী ও পুরুষের যৌন দুর্বলতা এবং তার চিকিৎসা
- যৌন মিলন দীর্ঘ সময় করার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি
- গ্লুকোমার আধুনিক চিকিৎসা
- ফিস্টুলার চিকিৎসা
- লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ৫টি উপায়
- অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ জটিলতা ও অপারেশন
- মানসিক রোগ থেকে বেঁচে থাকার ১০টি উপায়
- বুক ধড়ফড় করার ৮টি কারণ ও করণীয়
- গর্ভধারনের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
- স্লিম ও সুন্দর থাকতে গড়ে তুলুন ৪টি সহজ অভ্যাস
- বিভিন্নপ্রকার যৌন সমস্যা ও চিকিৎসা
- মুখের কালো দাগ ও ত্বকের মেছতার দাগ চিরতরে দূর করুন
- শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায়
- দীর্ঘক্ষণ সহবাস করার জন্য নাইট কিং
- নাকের পলিপাস : কারণ ও চিকিৎসা
- হার্টের ব্লকেজ নির্মূল করুন বিনা অপারেশনে
- মাথাব্যথা দূর করুন ১০ মিনিটেই
- গেজ, অশ্ব,পাইলসের সহজ চিকিৎসা
- ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় শক্তিশালী ১৬টি ভেষজ
- নারী-পুরুষের যৌনবাহিত রোগ চিকিৎসা
- নারীর অতিরিক্ত সাদাস্রাবের লক্ষণ ও চিকিৎসা
- পুরুষের গোপন সমস্যা, দ্রুত বীর্যপাতের সমাধান
- পুরুষাঙ্গে ব্যথা ও যন্ত্রণা : কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
- নারীর যৌন শীতলতার অন্তরালে ৭টি কারণ ও সমাধান
- পায়ুপথে চুলকানির কারণ ও চিকিৎসা
- লিভার সিরোসিস : কারণ ও প্রতিকার
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিন এবং শেয়ার করুন …