পুরুষের মনোযৌন সমস্যা ও চিকিৎসা

ডা. মিজানুর রহমান :

অনেকেই বলে থাকেন যে, এ সমস্যার কারণে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। অনেক স্ত্রী তার স্বামীকে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্যে তালাকও দিয়ে থাকেন। এমন অনেক রোগী আসেন আমার কাছে।

আমি খুব মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে তার চিকিৎসা প্রদান করি। আল্লাহর রহমতে এমন অনেক রোগীই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মুক্তি পেয়ে আমাকে ইনবক্সে দোয়া করে মেসেজ দিয়েছেন।

তাহলে কি সেই সমস্যা? আসুন আমরা বিস্তারিত জেনে নেই।

ক্ষুধা, তৃষ্ণাসহ অন্যান্য জৈবিক শারীরবৃত্তীয় চাহিদাগুলোর মতো যৌন চাহিদাও আমাদের জীবনে স্বাভাবিক। প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেও যৌন চাহিদা বিদ্যমান। মানব জাতির অস্তিত্ব তথা বংশপরম্পরায় ধারা টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের যৌন চাহিদা।

কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামী, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ নানা কৃষ্টি কালচারের কারণে যৌনতাকে খুবই নেতিবাচকভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরা হয় যার জন্য খোলামেলাভাবে যৌনতা এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারি না। যৌনতাকে খুব খারাপ এবং গোপনীয় একটা ব্যাপার বলে আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আর এ গোপনীয়তার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির মানুষ অপচিকিৎসার স্বীকার হচ্ছে।

আমাদের দেশে যৌনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ নেই। কোনো দিন হবে কিনা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বন্ধু-বান্ধব, কবিরাজ, ফুটপাতের ক্যানভাসার, পর্নোগ্রাফী ছবি, বই, বাসের জানালা দিয়ে ছুড়ে মারা লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমেই আমরা যৌনতা সম্পর্কে অপশিক্ষা লাভ করি।

যৌনতা দমনের কারণেই আমাদের দেশে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে যেটা আমরা নেতিবাচকভাবে মনে অবদমিত করে রাখব সেটা বিভিন্ন নেতিবাচকভাবে প্রকাশিত হবে। যেহেতু আমাদের দেশে যৌনতা নিয়ে স্বাভাবিক আলোচনা হয় না তাই কারও কোনো যৌন সমস্যা হলেও আমরা সেটা বুঝতেই পারি না। লুকিয়ে লুকিয়ে অপচিকিৎসা করে আরও বিষয়টাকে জটিল করে ফেলি।

আমাদের মধ্যে সাধারণত ২ কারণে যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে-

১। প্রাইমারি সেক্সুয়াল: এটা শারীরিক বা মেডিকেল সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। ফলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। যেমন এসটিডি, এসটিআই ইত্যাদি।

২। সেকেন্ডারি সেক্সুয়াল: মানসিক কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বেশিরভাগ যৌন সমস্যা হলো সেকেন্ডারি সেক্সুয়াল প্রবলেমন্স। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে মনোযৌন সমস্যা বলা হয়। আর এটার অন্যতম কারণ হলো যৌনতা সম্পর্কে কুসংস্কার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান থেকে পরিচালিত একটা গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষের মধ্যে যৌনতা সম্পর্কে নানারকম কুসংস্কারে বিশ্বাস রয়েছে। আর এ কুসংস্কারের কারণে যৌন সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মনে করা হয়- শুধু পুরুষদের মধ্যেই যৌন সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু ধারণাটি একদমই অমূলক। নারীদের মধ্যেও যৌন সমস্যা দেখা দেয় প্রবলভাবে যার জন্য মনোবিজ্ঞানীদের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। এ সমস্ত সমস্যার পেছনে শারীরিক কোনো কারণ থাকে না। তার মানে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ফিট হওয়া সত্ত্বেও কোনো একজন নারী বা পুরুষ যৌন জীবন উপভোগ নাও করতে পারে।

পুরুষদের মনোযৌন সমস্যাগুলো এবং যৌনতা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা আলোচনা করব। পরবর্তী লেখায় নারীদের মনোযৌন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

পুরুষদের মনৌযৌন সমস্যাগুলো-

১। যৌন আকাঙ্ক্ষার অভাব: পুরুষদের মধ্যে যৌন উত্তেজনা আসে এবং যৌন সুখ লাভ করেন কিন্তু তাদের যৌন কাজের প্রতি আগ্রহ তীব্রভাবে কমে যায়। নিজের মধ্যে যৌন আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণে সঙ্গীর সবধরনের যৌন আবেদন বা আচরণ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং পুরুষ নিজ উদ্যোগী হয়ে কখনও সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয় না।

কিছু কিছু পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় আগ্রহ না পেলেও হস্তমৈথন করে যৌন সুখানুভূতি লাভ করে। অনেক নারী অভিযোগ করে থাকেন যে তাদের স্বামী তাদের সঙ্গে যৌন মিলন না করলেও তাদের সামনেই হস্তমৈথুন করে। একজন নারী এ ধরনের আচরণ কখনও মেনে নিতে পারে না এবং এতে করে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় যেটা অন্যান্য ছোটখাট বিষয় দিয়ে প্রকাশিত হয়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ, ঝগড়াঝাঁটি, বিষন্ণ্নতা, সঙ্গীর প্রতি সন্দেহবাতিকতা ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২. ইরেক্টাইল ডিসফাংশন: সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সহবাস করার জন্য বা যোনিপথে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর জন্য লিঙ্গ প্রয়োজনীয় পরিমাণ শক্ত হয় না। আদর করার পরও তাদের লিঙ্গ শক্ত হয় না, অথবা হলেও যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর সময় লিঙ্গটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এতে করে লিঙ্গ যোনিতে ঢোকে না। অথবা ঢোকাতে পারলেও বীর্য বের হওয়ার আগেই লিঙ্গ নিস্তেজ হয়ে যায়। ফলাফল, সঙ্গীকে চূড়ান্ত যৌন সুখ দিতে পারে না। ৭-১৮ শতাংশ পুরুষদের মধ্যে জীবনে কোনো না কোন সময়ে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটাকেই মূলত পুরুষত্বহীনতা বলা হয়।

শৈশব নির্যাতন অথবা যৌন আঘাত, দীর্ঘমেয়াদি চাপ, সঙ্গীকে যৌনসুখ না দিতে পারার অপরাধবোধ, বিষণ্নতা, দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি কারণে ইরেক্টাইল ডিসঅংশানশন হতে পারে।

৩। দ্রুত বীর্যপাত: মাস্টার অ্যান্ড জনশন, সেক্স থেরাপিস্ট (১৯৭১) এর মতে, পুরুষদের মধ্যে এটা খুবই কমন সমস্যা। এখানে যৌন আদরের কারণে পুরুষদের লিঙ্গ উত্থিত হয় কিন্তু যৌন সহবাসের নিমিত্তে নারীর যোনিপথে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর পরপরই বীর্য বের হয়ে যায়। সময়ের হিসেবে বললে ১ মিনিটের ও কম সময়ের মধ্যে অর্গাজম হয়ে যায়। যদিও যৌনসঙ্গমের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই তবুও যদি দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে সঙ্গীর মনে হতে পারে যৌনসুখের সময়টা খুবই ক্ষণস্থায়ী ছিল বা পরিপূর্ণ/চূড়ান্ত সুখ লাভ করতে পারেনি।

এ রকম দ্রুত বীর্যপাত নারী এবং পুরুষ দু’জনের জন্যই চরম লজ্জাকর ও হতাশাজনক হতে পারে। ৩০-৪০ শতাংশ পুরুষের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এ সমস্যা হতে পারে। কারো মধ্যে এ সমস্যাটা ৬ মাস ধরে থাকলে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীদের শরণাপণ্ন হওয়া দরকার।

যদিও এর সঠিক কারণ এখনও অজানা তবুও মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, সঙ্গীকে সুখী করতে না পারার জন্য দোষী, নিজের শরীরের ইমেজ নিয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব, যৌন সহবাসের সময় সম্পর্কে ভুল ধারণা ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪. বিলম্বিত বীর্যপাত: এটা পুরুষের এমন একটি সমস্যা যেখানে দীর্ঘক্ষণ যৌনসঙ্গম করার ফলেও বীর্যপাত করতে পারে না বা বীর্যপাত হয় না। এমনকি ২৫/৩০ মিনিট পরেও বীর্যপাত হয় না। এতে করে পুরুষ কখনও ক্লাইমেক্স বা চরমপুলক লাভ করে না। ওদিকে সঙ্গীর অর্গাজম হয়ে যায় (শারীরিক স্বাভাবিক অবস্থা)। কিন্তু পুরুষের বীর্যপাত না হওয়ায় বা খুবই দেরিতে হওয়ার কারণে নারী সঙ্গীর অবস্থা তখন ভয়াবহ হয়ে যায়। এ অবস্থা যদি কোনো পুরুষের মধ্যে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা জরুরি।

এটাকে বিলম্বিত অর্গাজম বলা হয়। এ সমস্যার কারণে অনেক নারী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটায়। কিন্তু এটার চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যায়।

৫। যৌন বিতৃষ্ণা: এখানে পুরুষের মধ্যে যৌন কাজের প্রতি মারাত্মক অনীহা চলে আসে। যৌন কাজের বা যৌন সঙ্গমের প্রতি অনীহা ঘৃণা, অপমান, লজ্জা এবং আত্মসম্মানের সঙ্গে জড়িত থাকে। এ বিতৃষ্ণা বা অনীহা যে কোনো স্পেসিফিক কাজ যেমন ওরাল সেক্স অথবা যৌনিতে লিঙ্গ ঢুকানো নিয়ে হতে পারে, এটা হতে পারে বীর্যের গন্ধ, চুমু দেয়ার সময় লালার গন্ধের প্রতি। এটা হতে পারে সঙ্গীর যৌন অঙ্গ যেমন স্তন বা যোনির প্রতি। এটা হতে পারে যৌন সঙ্গম করার সময় সঙ্গীর বিভিন্ন শব্দের প্রতি।

যৌন বিরাগ পুরো যৌন কাজের প্রতিও হতে পারে। আবার হতে পারে নির্দিষ্ট একটা কাজের প্রতি। যেমন কোনো পুরুষ হয়তোবা শুধু যৌন সঙ্গম করতে পছন্দ করে, কিন্তু যৌন আদর যেমন- চুমু দেয়া, স্তন ঘর্ষণ করা, যোনিতে চুমু দেয়া ইত্যাদি পছন্দ করে না। অনেক নারী অভিযোগ করে থাকেন তাদের সঙ্গী কোনোরকম শারীরিক অন্য আদর ছাড়া লিঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করিয়ে দেন।

কোনো পুরুষের মধ্যে এ সমস্যা থাকলে সেটা তাদের সঙ্গীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কটা খারাপ করে দিতে পারে। তাদের ভালো যৌন সম্পর্ক হয়ে উঠে না। সম্পর্কটা তখন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। এ অবস্থা যদি কারও মধ্যে ৬ মাস চলতে থাকে এবং এজন্য যদি তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পেলে তাহলে এটা যৌন বিপর্যয় ডিসঅর্ডার।

চিকিৎসা: আমাদের দেশে যেহেতু যৌন সমস্যা বা রোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় না, তাই অনেকেই অপচিকিৎসার ফাঁদে পড়ে। বাংলাদেশের হার্বাল কোম্পানিগুলোর লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, ২৪ ঘণ্টায় সমাধানের নিশ্চয়তা প্রদানের লোভে অনেকেই প্রতারিত হন। অনেকেই পাশের ফার্মেসির বন্ধু থেকে ওষুধ নিয়ে সেবন করেন। এসব হার্বাল বা ওষুধ প্রাথমিকভাবে একটু সন্তোষজনক ফলাফল দিলেও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব অনেক।

যার কারণে যৌন জীবন পুরোটাই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই কারো মধ্যে উপরোক্ত যৌন সমস্যাগুলো দেখা দিলে সরাসরি ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন আপনার যৌন সমস্যাটা শারীরিক কোনো কারণে নয়, তাহলে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে ৭ দিনের সেক্স থেরাপির উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।

যারা এসব সমস্যার কারণে বিভিন্ন অপচিকিৎসা করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাননি, তারা সরাসরি চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীদের কাছে যেতে পারেন। তবে মনোবিজ্ঞানীদের কাছে প্রথমে স্বামী গেলেও চিকিৎসার ধাপে ধাপে স্ত্রীকেও যেতে হতে পারে।

বলা হয়ে থাকে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যতই সমস্যা থাকুক, মতের অমিল থাকুক, চাওয়া পাওয়া না মিলুক, কিন্তু দিন শেষে তাদের মধ্যে চমৎকার একটা রোমান্টিক যৌন-সম্পর্ক বাকি সব সমস্যাকে গৌণ করে দিতে পারে। যৌন সম্পর্ক শুধুই শারীরিক নয়, মানসিকও। তাই আপনাদের মধ্যে কারও যৌন সমস্যা থাকলে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সহযোগিতা নিন, যৌন জীবন উপভোগ করুন। জীবনকে উপভোগ করুন।

এসব সমস্যার জন্য যোগাযোগ করুন। ইনশাল্লাহ দুই থেকে তিন মাস ঔষধ সেবন করলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

সারাদেশে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে কুরিয়ার যোগে অর্ডার অনুযায়ী ঔষধ পাঠানো হয়। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন।

Dr. Mizanur Rahman (DUMS)

Ibn Sina Health care, Hazigonj, Chandpur.

Mobile.

01777988835

01762240650

01777988889

সকাল দশটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

Loading

শেয়ার করুন