ইমামপুর পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের অনিয়মে অতিষ্ঠ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

সফিকুল ইসলাম রানা : চাঁদপুরের মতলব উত্তরে ঐতিহ্যবাহী ইমামপুর পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সগীর আহমেদ এবং হিসাববিজ্ঞান শিক্ষক ফারুক আহম্মেদ বাদলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, শিক্ষার্থী নির্যাতন, শিক্ষকদের উপর দমন-পীড়ন এবং রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, এ দুই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন। কেউ প্রাইভেট না পড়লে তাকে পরীক্ষায় ফেল করানো, খাতা মূল্যায়নে ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর কেটে দেওয়া, অপমানজনক মন্তব্য করা ও মনোবল ভেঙে দেওয়ার মতো নানা ধরনের আচরণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারে সময় তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সেই প্রভাব ব্যবহার করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, নিয়োগ, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে। সরকারের পরিবর্তনের পর তারা আবার বিএনপি নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে পুনরায় কর্তৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, তারা সব সময় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। সরকারের রঙ বদলালেই তাদের রং বদলায়। এতে প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলে ক্লাসে ঠিকমতো কিছুই শেখান না। ক্লাসে বলেই দেন, ‘যদি ভালো করতে চাও, আমার বাসায় প্রাইভেট পড়তে হবে।’ কেউ না গেলে পরে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন।
একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে প্রাইভেট পড়তো না। পরীক্ষায় অনেক ভালো করলেও কম নম্বর দিয়েছে। মেয়েটা এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সোহেল প্রধান, নিশাদ মোল্ল্যা, শওকত সরকার, মহিউদ্দিন খান বলেন, আমরা সগীর আহমেদের ক্লাসে ছিলাম। উনি কখনোই ঠিকভাবে ক্লাস নিতেন না। বলতেন, ‘বুঝতে হলে প্রাইভেট আসো।’ আমি প্রাইভেট পড়তাম না বলে পরীক্ষায় ভালো লিখেও ন্যায্য নম্বর পাইনি। তখন কিছুই করতে পারিনি। এখন বুঝি, এটা শিক্ষার নামে চরম অন্যায়।
তারা আরো বলেন, স্কুলে অনেক ভালো পরিবেশ ছিল, কিন্তু ওই দুই শিক্ষক সব নষ্ট করে দিলেন। ফারুক হোসেন বাদল স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় ওনার আচরণ ছিল অসম্মানজনক। উনি ক্লাসে বলতেন, ‘তোরা তো প্রাইভেট পড়িস না, তোদের দিয়ে কিছু হবে না।’ এসব কথা শুনে অনেকেই ভেঙে পড়তো। এখনো আমরা মনে করি, সেসময়ের মানসিক চাপ থেকে পুরোপুরি বের হতে পারিনি।
এছাড়া বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, সগীর আহমেদ ও ফারুক আহম্মেদ বাদল দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের নানা প্রশাসনিক কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতা চালাচ্ছেন। কোনো সিদ্ধান্ত তারা এককভাবে নিচ্ছেন, বাকিদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কেউ কিছু বললে হুমকি বা অপমান করা হয়।
বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভীত-সন্ত্রস্ত। বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে পড়ানো নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকেই ভাবছেন সন্তানদের অন্যত্র পাঠানোর কথা।
বিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, এই স্কুল একসময় এলাকায় আলো ছড়াতো। এখন নানা অনিয়ম আর ক্ষমতার দাপটে সেটা এক অন্ধকার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসী বলেছেন, বিদ্যালয়টি একটি পুরনো ও সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান। কিছু অসাধু শিক্ষকের অপকর্মের কারণে পুরো বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষার্থীদের ওপর।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সগীর আহমেদ বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা সব সময় নিয়মিত ক্লাস নিই এবং শিক্ষার্থীদের উন্নতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিছু পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি, তাই কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে এইসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
অপর শিক্ষক ফারুক আহম্মেদ বাদল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছি। আমার নামে যে প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি কখনো কাউকে বাধ্য করিনি। বরং আমি যাদের পড়াই, তারা নিজের ইচ্ছায় আসে। কিছু অভিভাবক ও শিক্ষক আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, আমি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে। যদি সত্যতা পাওয়া যায়, যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব।
বৃহস্পতি বার, ২২ মে ২০২৫ খ্রি.
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

