জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে

সম্পাদকীয়

অতীতে শুনেছিলাম, একজন মহান ব্যক্তির উপর এলাকার মানুষ রেগে গিয়ে রাস্তার দু’পাশে রোপন করা গাছগুলোর প্রত্যেকটির গোড়ায় কেটে দিয়েছে। কেন কাটলো? ঐ লোকটির উপর রাগ করেই গাছগুলো কাটা হয়েছে; কেননা গাছগুলো তিনিই রোপন করেছিলেন। এতে কারই বা ক্ষতি হলো? আমার সবারই তো ক্ষতি হয়েছে! কিন্তু মহান ব্যক্তির কী ক্ষতি হয়েছে? কোনো ক্ষতি হয়নি। যদি গাছগুলো থাকতো প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষভাবেই আমরাই উপকৃত হতাম। গাছ থেকে অক্সিজেন পেতাম, ছায়া পেতাম, ফল পেতাম (হয়তো কিনেও খেতাম), কাঠ পেতাম-ইত্যাদি। আর গাছ কেটে ফেলায় সবই হারালাম। কাজেই এটা আমাদেরই ক্ষতি হলো।

অতএব,এজন্যেই বলাহয়, অন্যের ক্ষতি চাইলে নিজেরই ক্ষতি হয়। ধর্ম মানুষকে কল্যাণকামী হতে শেখায়। অপরের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করতে উৎসাহী করে। কারো ক্ষতি করা, কাউকে বিপদে ফেলতে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা কোনো নীতিসম্পন্ন মানুষের কাজ নয়। বরং এটি শয়তানের কাজ। শয়তান মানুষকে বিপদ ফেলতে সর্বদা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। পৃথিবীতেও শয়তানের কিছু অনুসারী আছে, যারা সারাক্ষণ অন্যের ক্ষতি করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। অন্যকে ফাঁসিয়ে দিতে জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আর কোনো মানুষের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।

কিছু মানুষ মিথ্যা নাটক সাজিয়ে অন্যকে জনসম্মুখে নিন্দিত করার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত থাকে, তারা মূলত নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে, যা তারা তাৎক্ষণিক অনুধাবন করতে পারে না। যারা চক্রান্ত করে, তাদের চক্রান্ত তাদেরই ঘিরে ধরে। কিন্তু তারা তা’ উপলব্ধি করতে পারে না। সেই কেটে ফেলা গাছগুলোর মতোই। কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, কাউকে কষ্টে ফেলে দেওয়া কল্যাণ বয়ে আনে না; বরং এগুলো মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। তাই অন্যকে ফাঁসিয়ে, অন্যের ক্ষতি করে স্বার্থ হাসিলে কোনো কল্যাণ নেই। কারো ক্ষতি করে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করলেও তাতে মনুষ্যত্ব টিকে থাকে না।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে; এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, আন্দোলন না করলে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। কিন্তু আন্দোলন করতে গিয়ে যদি নিজেরই ক্ষতি করা হয়; দেশ ও জাতির সম্পদ নষ্ট করা হয়; তাহলে ক্ষতিটা কারই বা হলো? এটা তো আমাদেরই ক্ষতি। আর সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠাও অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। ইদানিং আমরা আন্দোলনের মধ্যে বসবাস করছি। কিন্তু সেই আন্দোলন করতে গিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ কার ক্ষতি করছে?

এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা বিক্ষোভ, সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি-সব মিলে জীবনযাত্রা অনেকটা স্থবির করা হয়েছে। আমরা জানি, ১৬ থেকে ২১ জুলাই বাংলাদেশে যে নজিরবিহীন বিক্ষোভ আর সহিংস আন্দোলন হয়েছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনোই দেখা যায়নি। এত কম সময়ের মধ্যে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এবং অনেকের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর এতোগুলো তাজা প্রাণ অকালে ঝরে পড়া এবং এর ফলে তাদের পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি আমরা কীভাবে মেনে নিতে পারি।

এটা স্পষ্ট যে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে নাশকতা করে। টার্গেট করে তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয় মেট্রো রেলস্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা যোগাযোগব্যবস্থা, স্থবির হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি।

ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। মূলত, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এদেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে গড়ে তোলা সম্পদ, মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এসব ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে একান্তই দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষ। বিগত কয়েক দিনে উৎপাদনব্যবস্থা, পরিষেবা এবং ব্যবসা খাতে ব্যাঘাতের ফলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিবেশে দেশের জানমাল ও ভাবমূর্তির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো; তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের সময়ের প্রয়োজন হবে।

আমরা মনে করি, সবপক্ষকে একে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উদ্ভূত সংকটময় পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিনগুলোয় সরকারের পক্ষে থেকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ আমরা প্রত্যাশা করব। অন্যদিকে, সকলকে বুঝতে হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং সংযমের পথ অবলম্বন করেও দাবি আদায় সম্ভব। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সরকারের উচিত হবে প্রতিটি হত্যার ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা। পাশাপাশি যারা নাশকতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তিতে আঘাত হেনেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। উভয়পক্ষকে দেশ ও দশের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এ পরিস্থিতির সুরাহায় সবাইকে কঠোর মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

আন্দোলন বা বাধা প্রদানের মাধ্যমে কখনোই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। ধ্বংস ও সহিংসতা কখনো দেশের জন্যে মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। এছাড়া জনজীবন স্বাভাবিক করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে কোনো সাধারণ মানুষ কিংবা শিক্ষার্থী যেন হতাহতের শিকার না হয়, সে বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে।

কারও উসকানি কিংবা মদদে দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়ার কোনো মানে হয় না। আসুন লাভ-ক্ষতির হিসাব করি। গতদিনগুলোতে যে পরিমাণ ক্ষতি হলো, তা’ একবার চিন্তা করি। এ ক্ষতি কার হয়েছে? যে সম্পদ নষ্ট হলো তা তো আমাদেরই কষ্টের! সুতরাং এসব বন্ধ করি ও দেশের উন্নয়নে সকলেই এগিয়ে আসি।

শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোরিয়াসিস হলে কী করবেন?

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

Loading

শেয়ার করুন