পক্ষী বিশারদ বিজ্ঞানী সলিম আলি
দশ বছরের এক বালক। হাতে তার বন্দুক। খেলনা বন্দুক নয়, আসল বন্দুক। হঠাৎ সে দেখলো একটি সুন্দর পাখি তাঁর মাথার উপর নিয়ে উড়ে যাচ্ছে। হাতের নিশানা ঠিক করে গুলি করতেই উড়ে- যাওয়া পাখিটা ডিগবাজি খেয়ে পড়লো এসে মাটিতে।
হাতের বন্দুক রেখে ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে পাখিটাকে ধরে আনলো। নিজের হাতে শিকার করা পাখি। কি আনন্দ।
এটি ছিলো আসলে একটি হাঁস জাতীয় পাখি। এর গলায় ছিলো একটু হলদে দাগ। পাখিটাকে খুব আজব বলে মনে হলো তার কাছে। এমন পাখি সে এর আগে আর কখনো দেখেনি। তাই পাখিটাকে ঠিকমতো চিনতে পারলো না সে। পাখিটা তাহলে কি জাতের? ভারি কৌতূহল হলো তার। জানতেই হবে এটা কি পাখি। হঠাৎ তার মাথায় কি যেন একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। সে পাখিটা নিয়ে চলে এলো তার চাচা আমিরুদ্দিনের কাছে। তাঁর কাছেই সে জানতে চাইলো এটি কি জাতের পাখি। কিন্তু চাচা আমিরুদ্দিন তো সব পাখ-পাখালির নাম জানেন না ঠিকমতো। তিনি নিজেও চিনতে পারলেন না এটি কি পাখি। তখন চাচা এক বুদ্ধি বের করে বললেন, তা হলে এক কাজ করা যাক। কি কাজ? ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো। চলো আমরা বোম্বে ন্যাচারাল হিস্টোরি সোসাইটিতে যাই। চাচা বললেন, সেখানে অনেক সাহেব আছেন। তাঁরা সব পাখির নাম বলতে পারেন। সত্যি সত্যি তাই হলো। চাচা-ভাতিজা শিকার করা পাখিটা হাতে নিয়ে চলে এলেন বোম্বে ন্যাচারাল হিস্টোরি সোসাইটিতে। সোসাইটির অবৈতনিক সেক্রেটারি ছিলেন ডব্লিউ, এস, মিলার্ড। মিলার্ডের সাে পরিচয় ছিলো আমিরুদ্দিনের। তিনি এসে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর অতি উৎসাহী কিশোর ভাতিজাকে। সব শুনে মিগার্ড সাহেব তো মহাখুশি। এতটুকু একটি কিশোর বালকের পাখি সম্পর্কে এই বয়সেই জানবার কি প্রচণ্ড আগ্রহ! মিগার্ড ছেলেটিকে নিয়ে গেলেন তাঁর পাখির ঘরে। তারপর তিনি ছেলের হাতের পাখিটা ভালো করে লক্ষ্য করে নিয়ে নিজের আলমারি থেকে বের করে আনলেন অধিকার সেরকমই একটি পাখি। তক্রমধ্য মিলার্ডের আলমারি থেকে যে পাখিটা বের করে আনা হলো ওটা ছিলো শুকিয়ে রাখা মমির মতো পাখি।ছেলেটি কিন্তু পাখির ঘরে ঢুকে সত্যি অবাক। চারদিকে কতো রাজ্যের পাখি। কতো রঙ-বেরঙের পাখি। কতকগুলো জীবন্ত। আর কতকগুলোকে রাখা হয়েছে মৃত অবস্থায় শুকিয়ে মমি করে।
হাজারো পাখি দেখে সত্যি বিস্ময়ে থ মেরে গেলো ছেলেটি। সে শুধু অবাক বিস্ময়ে চারদিকে তাকিয়ে পাখি দেখছে।অবাক বিস্ময়ে তাকাতে তাকাতেই সে মিলার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো, এতোসব কি পাখি? আমি এসব পাখির নাম-পরিচয় জানতে চাই। মিলার্ড সাহেব ন্বিত হাসি হেসে বললেন, তুমি সত্যি জানতে চাও পাখিদের পরিচয়? পাখির পরিচয় জানতে তোমার খুব ভালো লাগে? ছেলেটি বললো, পাখিদের সম্পর্কে জানতে আমার খুব ভালো লাগে। বেশ, তুমি মাঝে মাঝে এসো। আমি তোমাকে সব পাখির নাম-পরিচয় শেখাবো। এই যে পাখিপ্রিয় ছেলেটির কথা এতোক্ষণ বলা হলো ইনিই হলেন পরবর্তীকালের পৃথিবী বিখ্যাত পক্ষীবিশারদ বলে খ্যাত সলিম আলি-যাঁকে বলা হয়ে থাকে পাখির গড ফাদার। সলিম আলির পুরো নাম সলিম ময়জুদ্দিন আবদুল আলি। জন্ম হয়েছিলো ভারতের বোম্বাই শহরে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ নভেম্বর।সলিম আলি তাঁর সারাটা জীবনই ব্যয় করেছিলেন পাখি পর্যবেক্ষণ করে। পাখিই ছিলো তাঁর সারা জীবনের ধ্যানজ্ঞান। পাখির নেশা তাঁর মাথায় প্রথম ঢুকিয়েছিলেন মিলার্ড সাহেব। তারপর সেই যে একবার নেশা চেপে গিয়েছিলো, আর কখনো সে নেশা দূর করতে পারেননি। তিনি হয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পক্ষীবিশারদদের একজন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উচ্চ ডিগ্রীধারী পণ্ডিত ছিলেন না। অথচ প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা পাখিবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম বাল্যকাল বেশিদিন স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। কলেজে প্রবেশ করার আগেই তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছিলো। বড় ভাই বার্মাতে একটি খনিতে কাজ করতেন। ভাইকে খনির কাজে সাহায্য করার জন্যই লেখাপড়া ছেড়ে বার্মায় আসতে হলো সলিম আলিকে। বড় ভাই অনেক আশা করে ডেকে এনেছিলেন সলিম আলিকে। কিন্তু সে আশা তাঁর পূরণ হলো না। সলিম আলির খনির কাজে মন ছিলো না। তিনি কাজ ফেলে শুধু ঘুরে বেড়াতেন বার্মার জঙ্গলে। সেখানে খুঁজে বেড়াতেন রঙবেরঙের পাখি। ভাই তাঁকে যতোই কাজে মনোযোগ দিতে বলতেন, তিনি ততোই পাখি পাগল হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে তাঁর ভাই বুঝলেন, একে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। একে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়াই ভালো। সালিম আলি বার্মী থেকে আবার বোম্বাই চলে জানেন ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে। দেশে ফিরে এসে জীববিজ্ঞান বিভাগে কলেজে ভর্তি হলেন। কিছুদিন পড়াশোনাও করলেন। কিন্তু কোর্স শেষ না করেই চাকরি নিলেন বোম্বাই ন্যাচারাল হিস্টোরি সোসাইটিতে। মিলার্ড সাহেব এখানে থাকতে নিয়মিত যাতায়াত ছিলো সোসাইটিতে। পরিচয় ছিলো কর্মকর্তাদের সাথে। সেই সূত্র ধরেই একটি গাইডের চাকরি জুটে গেলো। তখন তাঁর মাত্র ২০ বছর বয়স।
এখানে তাঁর কাজ ছিলো, দর্শকরা যাঁরা এখানে আসতেন তাঁদেরকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখানো। কোনটি কোন পাখি তা বোঝানো। পাখিদের আচার-আচরণ ইত্যাদি সব ব্যাখ্যা করতে হতো।এসব করার জন্য গাইডদেরকে পাখি সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা করতে হতো। তবে সলিম আলির কাজটি খুব ভালো লাগতো। তাঁর নেশার সাথে পেশার ছিলো হুবহু মিল। তিনি শুধু চাকরির তাগিদে নয়, মনের সাধ মেটানোর জন্যই পাখিদের সম্পর্কে পড়াশোনা করতে লাগলেন। পাখিদের সম্পর্কে সোসাইটিতে যতো বইপত্র ছিলো সব মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলেন তিনি। একদিকে বই পড়া আর অপরদিকে প্রত্যক্ষ দেখা। হাতে- কলমে শেখা। অল্পদিনের মধ্যে পাখি বিষয়ে প্রচুর জ্ঞানার্জন করে ফেললেন তিনি। তিনি ভাবলেন, শুধু দেশের পড়াশোনা নয়, এর জন্য বিদেশে গিয়েও শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।
এই উদ্দেশেই তিনি চলে গেলেন জার্মানিতে। সেখানে তিনি বিশ্বখ্যাত পক্ষিবিশারদ ড. আরউইন ট্রেসম্যানের অধীনে পাখি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। সলিম আলি জার্মানি ছিলেন এক বছর। ট্রেনিং শেষ করে স্বদেশে ফিরে এসে দেখলেন ইতোমধ্যে আরেক সর্বনাশ ঘটে বসে আছে। তিনি অফিস থেকে যদিও এক বছরের ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে দেখলেন চাকরিটাই নেই। তাঁর যে পদটি ছিলো, সেই পদটিই বাতিল করে দিয়েছে সোসাইটি। পদও নেই, চাকরিও নেই। তাই বিদেশ থেকে ফিরে এসে একেবারে পথে দাঁড়াতে হলো সলিম আলিকে। এদিকে তিনি বিয়ে করেছেন। ঘর-সংসার, তাদের খাওয়াতে-পরাতে হয়। কিন্তু চাকরি তো নেই। মহাবিপদে পড়লেন তিনি। তা ছাড়া তাঁর এমন কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই যে, অন্য একটি চাকরি যোগাড় করে নিতে পারবেন রাতারাতি। এর পরেও কথা আছে। অন্য কোথাও চাকরি হলেও বড়জোর একটি কেরানির চাকরি পেতে পারেন তিনি। এই কেরানির চাকরিতে তাঁকে সারাদিন থাকতে হবে অফিসের কাজে। তাহলে পাখি নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাবেন কখন? পাখিদের নিজে গবেষণার সুযোগ তিনি ছাড়তে পারেন না। এই বিপদের সময় এগিয়ে এলেন তাঁর স্ত্রী। বোম্বাই থেকে সামান্য দূরে কিহি নামক গ্রামে তাঁর স্ত্রীর একটি বাড়ি ছিলো। আপাতত সেই বাড়িতে গিয়েই আশ্রয় নিলো তিনি। মাথা গোঁজার ঠাঁই তো আছে। তারপর যা হোক একটা কিছু ব্যবস্থা হবেই। তিনি কিহিমের বাড়িতে উঠলেন। চাকরি নয়, এদিক-সেদিক টুকটাক কিছু কা করে দু’চার পয়সা আয় করতে লাগলেন। স্ত্রী নিজেও কিছু হাতের কাজ করে আয় করা লাগলেন। এই সামান্য আয় দিয়েই কোনোমতে সংসার চলতে লাগলো সলিম আলির সলিম আলির এই গ্রামের বাডিটির পরিবেশ ছিলো খব চমৎকার। চারদিকে অসংখ্য গাছপালা।
গাছপালা। গাছের ডালে এসে প্রতিদিন জড়ো হতো হাজার হাজার রঙবেরঙের চেনা অচেনা পাখি। তিনি সারাদিন কাটিয়ে দিতেন এই পাখি দেখে দেখে। তাঁর স্ত্রীও স্বামীর এই নেশাকে বুকতেন। তাঁকে কোনো কাজ করতে দিতেন না। সলিম আরি ডুবে থাকতেন তাঁর নিজস্ব পাখির রাজ্যে। এখানে তিনি বনের বয়নকারী পাখিদের উপর গবেষণা করছিলেন। তিনি ১৯৩০খ্রিস্টাব্দে বয়নকারী পাখিদের উপর এমনি করে তৈরি করে ফেললেন একটি গবেষণাপত্র। পরে এটি প্রকাশিত হয় পুস্তকাকারে। প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন তিনি। নাম ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। তিনি স্বীকৃতি পেলেন একজন পক্ষীবিশারদ হিসেবে। এর পরেই তাঁর উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। শুধু দেশি পাখি নয়, বিদেশি পাখি নিয়েও গবেষণা করতে হবে। তাই তিনি এবার ঘর থেকে বের হলেন। ভারত এক বিশাল দেশ। এর রয়েছে কতো বিচিত্র স্থান, বিচিত্র পরিবেশ। সেখানে আছে হাজারো রকমের পাখ-পাখালি।
এবার তিনি সত্যি সত্যি বেরিয়ে পড়লেন। ঘুরতে লাগলেন ভারতের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে। পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন পাখিদের। কতো হাজার রকমের পাখি। তিনি ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগলেন। পরীক্ষা করতে লাগলেন। লিপিবদ্ধ করতে লাগলেন সংগৃহীত সব তথ্য। এই সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তিনি রচনা করলেন একটি বই। নাম দিলেন ‘দি বুক অব ইন্ডিয়ান বার্ডস। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে।
এই বইটিতে তিনি ভারতীয় পাখি সম্পর্কে সংযোজন করেছেন অনেক অজানা ও নতুন তথ্য। বইটি প্রচুর জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০,০০০ কপি বিক্রি হয়েছে।
এর পর তাঁর পাখি গবেষণার পরিধি আরো বেড়ে যায়। সলিম আলির সাথে এসে যোগদান করেন বিশ্বের আরেক বিখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ মি. এস. ডিলন রিপ্লে। সলিম আলি এবং ডিলন রিপ্লে মিলে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু করলেন পাখি বিষয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম। দু’জনে ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে সংগ্রহ করতে লাগলেন চমৎকার সব তথ্যাবলী। আর এসব তথ্য নিয়ে তৈরি হলো বিশ্বের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও সর্বাধিক তথ্যবহুল পাখি বিষয়ক গ্রন্থ ‘হ্যান্ডবুক অব দি বার্ডস অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’। এটি একটি বিশাল গ্রন্থ। দশ খণ্ডে সমাপ্ত এই গ্রন্থে ভারত ও পাকিস্তানে দেখা যায় এমন সমন রকমের পাখির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিটি পাখির আকার আকৃতি স্বভাব ও জীবনযাত্রা ইত্যাদি। এমন ব্যাপক কার্যক্রম ইতোপূর্বে হয়েছে বলে জানা নেই। পৃথিবীতে পাখি বিষয় এমন তথ্যবহুল গ্রন্থ আর রচিত হয়নি। শুধু এটি নয়। এছাড়া সলিম আলি এককভাবেও আরো রচনা করেছেন কয়েকটি পাখি বিষয়ক তথ্যবহুল গ্রন্থ। এর মধ্যে একটি তথ্যবহুল গ্রন্থ হলো ‘দি ফল স্প্যারো’।
এ বইটিতে পাখি গবেষণার সাথে সাথে নিজের জীবনেরও অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে। পাখির উপর গবেষণা চালাতে নিয়ে বিজ্ঞানী সলিম আলি তাঁর জীবনের ৬৫ বছর একটানা ভ্রমণ করে বেরিয়েছিলেন পথে-প্রান্তরে, বনে-জঙ্গলে আর দেশ-দেশান্তরে। পাখিবিষয়ে তাঁর এমন গভীর জ্ঞান ছিলো যে, লোকে তাঁকে বলতো পাখির বিশ্বকোষ। তিনি শুধু পাখির উপরই গবেষণা করেননি। তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপরেও গবেষণা করেছেন। কোন কোন পরিবেশ বন্য পশুপাখির জন্য অনুকূল, তার উপরও তিনি তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণা করেন।
এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ৫,০০,০০০ টাকার একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাও করেন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি নিজে ভোগ করেননি। তিনি ছিলেন নির্লোভ এক জ্ঞান তাপস। সংসারে তাঁর অভাব-অনটন ছিলো। এই বিরাট অঙ্কের টাকা তাঁর সংসারে অনায়াসে সুখ এনে দিতে পারতো। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি তাঁর পুরস্কারের সমস্ত অর্থই দান করেছেন বোম্বে ন্যাচারাল হিস্টোরি সোসাইটিতে, যে সোসাইটি একদা তাঁকে পাখি গবেষণায় উৎসাহিত করেছিলো এবং যে সোসাইটি তাঁকে একবার চাকরিহারা করে পথে বসিয়েছিলো। সেই সোসাইটিরই উন্নতিকল্পে তিনি দান করেছিলেন তাঁর প্রাপ্ত সমস্ত অর্থ। এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে সম্ভবত বিরল। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাকে ১৯৫৮ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৭৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। সারা জীবন ধরে পাখি নিয়ে গবেষণা করে ৯০ বছর বয়সে উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ পাখিবিশারদ সলিম আলি ১৯৮৭ খৃষ্টাব্দের ২০ জুন তারিখে পরলোক গমন করেন। কিন্তু তাঁর গবেষণার কথা আজো কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে আছে। সালিম আলীর পুরো নাম সালিম মঈজুদ্দীন আব্দুল আলি। একজন বিখ্যাত ভারতীয় পক্ষীবিদ এবং প্রকৃতিপ্রেমী। তিনিই প্রথম কয়েকজন ভারতীয়দের মধ্যে একজন যাঁরা ভারতের পাখিদের সম্বন্ধে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জরিপ পরিচালনা করেন। তার পাখিবিষয়ক বইগুলি পক্ষীবিজ্ঞানের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৭-এর পর তিনি বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটিতে গুরুত্বপূর্ণ আসনে জায়গা করে নেন এবং সংগঠনটির উন্নয়নে সরকারি সাহায্যের সংস্থান করে দেন। তিনি ভরতপুর পক্ষী অভয়ারণ্য (কেওলাদেও জাতীয় উদ্যান) প্রতিষ্ঠা করেন এবং তারই উদ্যোগে বর্তমান সাইলেন্ট ভ্যালি জাতীয় উদ্যান নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। এছাড়াও তিনি ১৯৫৮ সালে রাজ্যসভায় সদস্যরূপে মনোনীত হন। পাখি বিষয়ে তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি “ভারতের পক্ষীমানব” হিসেবে পরিচিত।
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
শ্বেতীর সাদা দাগ দূর করার উপায় কি?