পানি দূষণই এখন মেঘনার বড় শত্রু, নদীতে জাল ফেলে ফিরছে শূন্য হাতে”

সফিকুল ইসলাম রানা : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা। ফলে মাছঘাট ও বাজারেও দেখা যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের সরবরাহ। বাজারে যে অল্পসংখ্যক ইলিশ উঠছে, সেগুলোর দামও আকাশচুম্বী।

স্থানীয় জেলেরা জানাচ্ছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও নদীতে নেমে তারা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। একদিকে নদীতে মাছের উপস্থিতি কম, অন্যদিকে খরচ মিটিয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগও নেই বললেই চলে। ফলে অনেকেই পেশা বদলে কৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছেন।

উপজেলার আমিরাবাদ, এখলাছপুর, ষাটনল ও আশপাশের মাছঘাটগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বড় ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। বাজারে যেসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২৫০০-৩০০০ টাকা, ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০ টাকা, আর ৫০০ গ্রামের ইলিশের কেজি দামে হাঁকা হচ্ছে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশও বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

বাহাদুরপুর গ্রামের জেলে ইউসুফ কবিরাজ বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর দিক থাইকা যেইসব বিষাক্ত পানি আইতাছে, ওইটা সব মেঘনায় আইসা পড়ে। এইজন্যই এহন নদীত আগের মতো ইলিশ দেখা যায় না। হেই বিষে প্রতিবছর অনেক মাছ মইরা পানিতে ভেসে উঠে। এতদিন ধরে মাছ ধরেই সংসার চলাইতাম, কিন্তু এখন আর হেইভাবে হইতাছে না। তাই বাধ্য হইয়া অনেকেই এই পেশা ছাইড়া অন্য কাম-কাজে যাইতাছে।

ষাটনল মালেপাড়া এলাকার জেলে টিটু বর্মন বলেন, আগে এই মেঘনায় জাল ফাইলেই ইলিশ উঠত, এখন দিন পার হইতাছে জাল খালি নিয়াই ঘরে ফিরতাম। নদীতে মাছ নাই বললেই চলে। উপরে থাইকা যেই বিষাক্ত পানি আইতাছে, ওইটাই মাছডার সব নষ্ট কইরা দিতেছে। খরচ উঠতেছে না, তাই এখন ভাবতাছি অন্য কাম-কাজে লাগমু, না হয় পেট চলবে কেমনে?

বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা মো. জমির বলেন, “ইলিশের দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের জন্য কেনা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাদ নিতে চাইলেও সাধ্য সায় দিচ্ছে না।” একই অভিমত জানান আমিরাবাদ বাজারের এক আড়তদারও।

আড়তদার মো. আবু ইউসুফ জানান, মাছ না পাওয়ায় এখনো অনেক জেলে নদীতে নামেননি। যারা নেমেছেন, তারাও হাতে গোনা কয়েকটি ছোট ইলিশ নিয়ে ফিরছেন। ফলে অনেকেই এখন কৃষিকাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।

মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, মার্চ-এপ্রিলে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও এ সময় নদীতে পানিপ্রবাহ কম থাকে এবং তাপমাত্রাও বেশি থাকে। ইলিশ মূলত ঠান্ডা জলের মাছ, তাই এই সময়ে সাগরে অবস্থান নেয়। তবে বর্ষাকালে পানি বাড়লে ইলিশ আবার নদীতে ফিরে আসবে, এটাই আমাদের আশা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নদীতে ইলিশের উপস্থিতি খুবই কম। এর পেছনে প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও একটি বড় কারণ হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানি। এই নদীর বিষাক্ত বর্জ্য মেঘনায় এসে পড়ায় এর জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী কমে যাচ্ছে। তবে বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

মেঘনায় এখন ইলিশের মন্দা। ফলে বাজারে সরবরাহ কম, দাম বেশি। অনেক জেলে বাধ্য হয়ে কৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বর্ষা এলে আবার ইলিশে ভরবে নদী।

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

সোরিয়াসিস হলে কী করবেন?

স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?

ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ

শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

শেয়ার করুন

Loading

শেয়ার করুন