মতলবে জীবগাঁও কলেজে শতভাগ ফেল

সফিকুল ইসলাম রানা ; চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের ফলাফলে সবচেয়ে হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে জীবগাঁও জেনারেল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রতিষ্ঠানটির মোট ১৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও একজনও পাস করতে পারেনি। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাসের হার শূন্য শতাংশ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মতলব উত্তর উপজেলার ১১টি কলেজ থেকে মোট ১ হাজার ৭৮২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৪০৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে এবং মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ (এ প্লাস) পেয়েছে। পাসের গড় হার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে আলিম পর্যায়ে উপজেলার ছয়টি মাদ্রাসা থেকে ১৫৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে ৮৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে পাসের হার ৫০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে আলিম পর্যায়েও কোনো শিক্ষার্থী এ প্লাস অর্জন করতে পারেনি।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, গ্রামীণ অঞ্চলের কলেজগুলোতে শিক্ষকদের উপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনিয়মিতা ও কোচিং নির্ভর শিক্ষার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল পাঠদানের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার মান ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে।
এদিকে উপজেলায় এ বছর ভোকেশনাল পর্যায়ের কোনো পরীক্ষার্থী ছিল না বলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জীবগাঁও জেনারেল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এমন শতভাগ ব্যর্থতায় স্থানীয় শিক্ষামহলে হতাশা নেমে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী হোসেন বলেন, এ ফলাফল আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। দীর্ঘদিন শিক্ষক সংকট, শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতি এবং পরিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে পাঠদানে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়নি। কলেজটি টিকিয়ে রাখার জন্য দুর্বল ছাত্রদের ভর্তি করিয়েছিলাম। তারা ঠিকমতন কলেজে ক্লাস করতে আসেনি এই কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রস্তুতি ক্লাস শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফুল আলম বলেন, জীবগাঁও জেনারেল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। শিক্ষার মান উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে, যাতে আগামী বছর এ রকম ফলাফল আর না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফল করছে, তাদের একাডেমিক কার্যক্রমের ওপর আলাদা মূল্যায়ন করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, শিক্ষা একটি সমাজের ভিত্তি। ফলাফল পর্যালোচনা করে আমরা দুর্বল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
![]()





















