মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে অবৈধ রিং চাইয়ের দখলদারিত্ব: বিপন্ন জলজ প্রাণী ও জেলেদের জীবন

সফিকুল ইসলাম রানা : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে দিন দিন বাড়ছে অবৈধ রিং চাইয়ের (পাইপের মতো দেখতে মাছ ধরার ফাঁদ) ব্যবহার। এসব জালের ফাঁদে পড়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রজনন চক্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং মাছের বংশবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়েছে।

উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীপাড়ের দশানী, এখলাসপুর, ষাটনল, আমিরাবাদ, কালীপুর, বেলতলী, নন্দলাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রিং চাই সারি করে বিছানো রয়েছে। জেলেরা সেখানে বসে জাল মেরামত করছেন, কেউবা নতুন জাল তৈরি করছেন। দশানী এলাকায় আল-আমিন নামের একজন জেলে জানান, আমার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম এই মাছ ধরা। মুন্সিগঞ্জ থেকে পুরনো রিং চাই ৮০০-৯০০ টাকায় কিনে নিয়ে আসি। নদীতে বসিয়ে মাছ ধরি, তারপর বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাই।
তবে এ কাজ যে অবৈধ, তা তারা জানেন। আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসন মাঝে মাঝে এসে চাইগুলো উঠিয়ে নিয়ে যায়। তখন আমাদের বড় ক্ষতি হয়। কিন্তু কোনো বিকল্প পেশা বা সহায়তা নেই। তাই বাধ্য হয়েই আবার নদীতে নামি।
এই জাল দিয়ে মাছ শিকারে ক্ষতির পরিমাণ শুধু অর্থনৈতিক না, বরং পরিবেশগতও। মৎস্য বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম বলেন, রিং চাই একটি নিষ্ঠুর ফাঁদ। একবার মাছ ঢুকলে, ছোট-বড় সবই আটকে পড়ে। এই ধরনের জাল প্রজনন মৌসুমে ব্যবহার করা হলে, মাছের বংশবৃদ্ধি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নদীর সামগ্রিক ইকোসিস্টেম ব্যাহত হয়।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘মতলবের মাটি ও মানুষ’ এর পরিচালক শামীম খান বলেন, প্রায়শই দেখা যায়, শুধু মাছই নয়, নদীর কাঁকড়া, শামুক, এমনকি কচ্ছপও এই জালে আটকে পড়ে মারা যায়। জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, রিং চাই সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। গত মাসেও ৪৫০টির বেশি চাই ধ্বংস করা হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, অভিযানের কিছুদিন পরেই আবার নতুন জাল বসানো হয়। এটা এক ধরনের ‘ক্যাট অ্যান্ড মাউস’ খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞের মতে, কেবল অভিযানে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, মৎস্য প্রশিক্ষণ, সহজ ঋণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা না করলে তারা আবার পুরোনো পথে ফিরে যাবেন।
মেঘনা ও ধনাগোদার মতো দেশের প্রধান নদীগুলোতে এভাবে অবৈধ জাল ব্যবহার চলতে থাকলে অচিরেই নদী শূন্য হয়ে যাবে। মাছ যেমন হারাবে, তেমনি হারাবে হাজারো জেলের জীবন-জীবিকা। এখনই সময় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার—প্রশাসন, পরিবেশবিদ, স্থানীয় সরকার এবং সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নদী ও জেলেদের রক্ষা করতে হবে।
রোব বার, ২৫ মে ২০২৫ খ্রি.
স্ক্যাবিস বা চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধে শক্তিশালী ঔষধ
শ্বেতী রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা
যৌন রোগের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
চর্মরোগ দাউদ একজিমা বিখাউজের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
![]()

















